বাংলাদেশ হারাল আরও একজন সূর্যসন্তান !!
ইতিহাস দুঃসাহসের পূজারী। জর্ডানের একটি হকার হান্টারে পাইলটের সিটে বসে আছেন অকুতোভয় এক যুবক, এই পাল্টা প্রতিরোধের প্রধান সেনানী। ঈগল পাখির নিশানা তার সুতীক্ষ্ণ দু’চোখে। আকাশপথের সম্মুখ সমরেও যার স্নায়ুচাপ অবিচল, দুধর্ষ প্রতিপক্ষের সামনে যার মনোবল ইস্পাতকঠিন। সেই হকার হান্টার থেকেই সে যুবক নির্ভুল নিশানায় ঘায়েল করলেন দুই ইসরাইলি সেনাকে। ঐ মুহূর্তে কল্পনাতীত এক কাণ্ডও ঘটালেন, অব্যর্থ আঘাতে ভূপাতিত করে ফেললেন একটি ইসরাইলি ‘সুপার মিস্টেরে’। আরেক আঘাতে প্রায় অকেজো করে দিলেন তাদের আরেকটি জঙ্গী বিমান, ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সেটি ফিরে গেল ইসরাইলি সীমানায়।
এই কৃতিত্বের অধিকারী হলেন বাংলাদেশের বিমানসেনা সাইফুল আজম। এককভাবে সর্বোচ্চ ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করার রেকর্ড তাঁর দখলে। সাইফুলের কৃতিত্বে মুগ্ধ হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে উপাধি দিয়েছিল লিভিং ঈগল। এই উপাধি এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে মাত্র ২২ জন পেয়েছেন। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে সাইফুল মোট চারটি ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করেন। ইরাক ও জর্ডানের পক্ষ থেকে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রোববার (১৪ জুন) সকালে ঢাকার মহাখালি ডিএসএইচও’র তার নিজ বাস ভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘদিন তিনি নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন।
১৯৪১ সালে পাবনা জেলার খগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই সাইফুল আজম। উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পাশ করে ১৯৫৬ সালে উচ্চতর শিক্ষার্থে পশ্চিম পাকিস্তান যান। ১৯৬০ সালে জিডি পাইলট ব্রাঞ্চের একজন পাইলট হন তিনি। ১৯৭১ সালের পূর্বে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ৬ জুন তাকে ইরাকি বিমান বাহিনীতে বদলি করা হয়। বিমানঘাঁটি আক্রমণের সময় তিনি পশ্চিম ইরাকে ছিলেন। সাইফুল আজম তার বর্ণাঢ্য জীবনে নিজেই কিংবদন্তির ইতিহাস রচনা করেছিলেন। পৃথিবীর ২২ জন “লিভিং ঈগলের” মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।