মানুষের নিকট নিজের অভাব প্রকাশ করলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন !!
আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে পরীক্ষার কথা আল কোরআনের বহু জায়গায় এসেছে। সম্পদের ক্ষতি, মৃ’ত্যু ও অভাব দিয়ে সে পরীক্ষা হয়ে থাকে। যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তাদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণ দেয়া হয়েছে। সে পুরস্কার ইহকাল, পরকাল বা উভয় জগতে পেতে পারে।
আমরা অনেকে পরীক্ষায় অধৈর্য হয়ে পড়ি। আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুর পর এমনভাবে কান্না করি যেন আল্লাহর ফয়সালাকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। অথচ মুসলমানের কর্তব্য, সর্বাবস্থায় আল্লাহর ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকা। অভাবে পড়ে মানুষের কাছে হাত পাতা শুরু করি। নিজের শক্তি সামর্থ্যরে দিকে তাকাই না।
এতে ভিক্ষার রাস্তা খোলে দেয়া হয়। একজন মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় কোনো ক্ষতি হতে পারে না। নবী করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হয়ে, অভাবের কথা মানুষের কাছে বলে বেড়ায় তার অভাব কোনো দিন দূর হয় না। আর যে লোক নিজের অভাবের কথা মানুষের কাছে পেশ করে না বরং যাবতীয় প্রয়োজন আল্লাহর সামনে পেশ করে, খুব দ্রুত বা বিলম্বে আল্লাহ তায়ালা তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (তিরমিজি, হাদিস নম্বর-২৩২৬)।
মানুষের কাছে অভাবের কথা পেশ করলে অভাব শেষ না হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এতে আল্লাহ তায়ালা নাখোশ হয়ে আজকে এই প্রয়োজন, কালকে আরেকটা এভাবে প্রয়োজন সামনে এনে সবর্দা মানুষের সামনে হাত পাতার ব্যবস্থা করে রাখেন। আর আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে তিনি প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করে দেন।
তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা:
সূরা আনফালে এসেছে, ‘আল্লাহর ওপর ভরসা কর, নিশ্চয় তিনি মানুষের আর্তনাদ শোনেন এবং মানুষের অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান রাখেন।’
তাই মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে চলা। মুমিন যদি আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে চলতে পারে তাহলে পাখিদের ন্যায় তার রিজিকের ব্যবস্থা করা হবে। একটি পাখি সারা দিন খেয়ে বাসায় ফিরে আসে। পরের দিন কি খাবে চিন্তা করে না। পরের দিন বাসা থেকে বের হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন। মানুষও এই ব্যবস্থার আওতায় থেকে জীবন যাপন করতে পারবে পাখির মতো ভরসা হলে।
জনৈক ডাকাতের তওবার ঘটনা: মধ্যপ্রাচ্যের প্রসিদ্ধ একটি গোত্রের নাম কুর্দী। বর্তমানে তারা ইরাক, তুরস্ক ও সিরিয়া অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করছে। কুর্দীদের এক দল ডাকাত নিজেদের কাজ শেষ করে একটি বাগানে আশ্রয় নেয়। সেখানে তিনটি খেজুর গাছ ছিলো। একটি মরা আর বাকি দু’টিতে ফল ছিলো। একটি পাখি খেজুর নিয়ে মরা গাছে যাওয়া-আসা করছিলো। ডাকাত সর্দারে মনে আগ্রহ হলো পাখিটির গন্তব্য দেখার জন্য। সে মরা খেজুর গাছে ওঠে দেখে একটা অন্ধ সাপ সেখানে হা করে আছে। পাখিটি খেজুর নিয়ে ওই সাপের মুখে দিচ্ছে। এভাবেই সে বেঁচে আছে। ঘটনাটি দেখে ডাকাতের ঈমান জেগে ওঠলো। আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলো, হে আল্লাহ! তোমার একটা সৃষ্টি যখন অন্ধ হয়ে গেলো তুমি তার রিজিকের জন্য একটা পাখিকে নিযুক্ত করে দিয়েছ। আমার জন্যও এমন একটা ব্যবস্থা হয়তো থাকতো। কিন্তু আমি তোমার ওপর ভরসা না করে অসৎ পথে চলেছি। আমাকে ক্ষমা করুন আল্লাহ!
তাই সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে চলতে হবে। নিজের শক্তি-সামর্থ্যরে ওপর ভরসা করে আল্লাহকে ভুলে গেলে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এই শিক্ষাকে সর্বদা ধারন করে চলার জন্য দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘রাব্বানা লা তাকিল না ইলা আনহুসেনা তরফাতা আইন’ অর্থ- হে প্রভু! ক্ষণিকের জন্যও আমাদেরকে নিজের ওপর সোপর্দ করো না। তোমার আশ্রয়ে রেখো সর্বদা।’ আমিন। উৎস: ডেইলি বাংলাদেশ