আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে স্বর্ণের দাম, আর বাংলাদেশে…
ম’হামারি করোনাভা’ইরাসের প্রকোপে ফেব্রুয়ারি-মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে পতন হলেও সম্প্রতি আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় এক শতাংশ।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক দরপতন হওয়ায় গত মার্চে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমানো হয়। তবে গত দুই মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়লেও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়নি।এমন হলে বর্ডার দিয়ে স্বর্ণ পাচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একজন কোমরে করে যদি ২০-২৫ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যেয়ে ভারতে বিক্রি করে তাহলে ৫০ হাজার টাকার মতো বেশি পাবে। একজন মাসে দুইবার ভারতে যেতে পারলেই তার ১ লাখ টাকা লাভ হয়ে যাবে।
এতে দেশের বাজারে লোকসানে স্বর্ণ বিক্রি করতে হচ্ছে বলে দাবি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ স্বর্ণ কিনে মজুত করছেন। এতে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।কিন্তু করোনাভা’ইরাসের কারণে দেশের বাজারে স্বর্ণের বিক্রি ব্যাপক হারে কমে গেছে। যে কারণে চাহিদা না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পরও দেশের বাজারে বাড়েনি।
তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয় না করার কারণে দেশের স্বর্ণ বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দেশ থেকে স্বর্ণ পাচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন স্বর্ণের সংকট দেখা দেবে।তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৪৫৪ ডলার। এরপর করোনাভা’ইরাসের প্রকোপের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬০ ডলারে উঠে যায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের এই দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হয়। ফলে গত ফেব্রুয়ারিতে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম রেকর্ড ৬১ হাজার ৫২৭ টাকায় উঠে। এছাড়া ২১ ক্যারেট ৫৯ হাজার ১৯৪ এবং ১৮ ক্যারেটের ৫৪ হাজার ১৭৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ হয় ৪১ হাজার ৪০৭ টাকা।
তবে মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়। এক ধাক্কায় দাম কমে প্রতি আউন্স ১৪৬৯ ডলারে নেমে আসে। এ প্রেক্ষিতে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়।স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সেসময় ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে ৬০ হাজার ৩৬১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৮ হাজার ২৮ এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫৩ হাজার ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ৪০ হাজার ২৪১ টাকা।
মার্চে দরপতন হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেয়নি। হু হু করে দাম বেড়ে মে মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ১৭৪৮ ডলারে উঠে যায়। এরপর ছোট খাটো উত্থান-পতন হলেও গত এক সপ্তাহে স্বর্ণের দাম আবার বেড়েছে। এক সপ্তাহে স্বর্ণের দাম দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ১৭৪৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৩ শতাংশ। অবশ্য মাসের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম পুনঃনির্ধারণ করার পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২৭৩ ডলার বা ১৯ শতাংশ।এ প্রসঙ্গে ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার গঙ্গাচরণ মালাকার জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারের গেমলাররা স্বর্ণে ইনভেস্ট করছে। এছাড়া ভারতেও স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে গেছে। আমাদের এখানে আন্তর্জাতিক বাজারের থেকে স্বর্ণের দাম কম। পাকা স্বর্ণের দামের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে আমরা ভরিতে ১৮২ টাকা লোকসানে জুয়েলারি সামগ্রী বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, করোনার কারণে মানুষ বাইরে কম বের হচ্ছে। স্বর্ণ মানুষ সেইভাবে কিনছে না। দোকান খোলার পর আমরা এক ভরিও পাকা স্বর্ণ কিনিনি। আমাদের বিক্রি নাই। বিক্রি না থাকায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাড়েনি। তবে চাহিদা বাড়লে সামনে দাম বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম না বাড়ালে দেশ থেকে স্বর্ণ পাচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতে আমাদের থেকে পাকা স্বর্ণের দাম আড়াই হাজার টাকা বেশি। এমন হলে বর্ডার দিয়ে স্বর্ণ পাচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একজন কোমরে করে যদি ২০-২৫ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যেয়ে ভারতে বিক্রি করে তাহলে ৫০ হাজার টাকার মতো বেশি পাবে। একজন মাসে দুইবার ভারতে যেতে পারলেই তার ১ লাখ টাকা লাভ হয়ে যাবে। আবার শুনছি ভারতের সঙ্গে কোরবানির পশু কেনা-বেচাও স্বর্ণ দিয়ে হয়।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, মহামারির কারণে বিশ্ব মন্দার দিকে গেলেও স্বর্ণের দাম বেড়ে গেছে। দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়বে। বিশ্বে মন্দা দেখা দিলে মেটালের চাহিদা বেড়ে যায়, এ কারণে স্বর্ণের দামটা বেড়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের এখানে বিক্রি একেবারেই নেই, এ কারণে দাম সেইভাবে বাড়েনি। চাহিদা বাড়লেই দাম বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, আগে কেনা থাকলে আপনাকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম সমন্বয় করতে হবে। তা না হলে দেখা যাবে বাংলাদেশ থেকে সব স্বর্ণ উধাও হয়ে যাবে। তখন কী হবে। সমন্বয় করে না রাখলে ব্যবসা করা যাবে না। কোনদিক থেকে কিভাবে চলে যাবে টেরও পাওয়া যাবে না। সূত্রঃ জাগো নিউজ২৪