যে কারণে মানুষের মুখস্ত শক্তি কমে যায় !!
জ্ঞান বা ইলম-ই হচ্ছে মানুষের প্রকৃত সম্পদ ও শক্তি। এটি মহান আল্লাহর দেয়া অনন্য নেয়ামত। জ্ঞান বা ইলমের মতো মহামূল্যবান সম্পদ দিয়েই আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষ যখন অন্যায় বা গোনাহে লিপ্ত হয় তখন তার জ্ঞান কমে যায়। গোনাহ করার কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষ থেকে তার জ্ঞান তুলে নেন। শুধু জ্ঞানই নয় বরং গোনাহ করার কারণে মানুষের মুখস্ত শক্তিও কমে যায়।
আল্লাহ তাআলা কোনো গোনাহগারকে জ্ঞান ও মুখস্ত শক্তির মতো মহামূল্যবান নেয়ামত দান করেন না। যদিও কোনো গোনাহগার জ্ঞানের অধিকারী হয় তবে বুঝতে হবে এটি ওই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাপরীক্ষা। এসব জ্ঞানী ব্যক্তিরা দুনিয়াতে এমন এমন সমস্যার সম্মুখীন হবে, যা তাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আবার পরকালে এ জ্ঞানরাই তাদের নিজেদের বিপক্ষে গোনাহের প্রমাণ হিসেবে আবির্ভূত হবে।
গোনাহের কারণে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাকে দেয়া জ্ঞান তুলে নেন। শুধু জ্ঞানই নয় গোনাহ মানুষের মুখস্ত শক্তিও কমিয়ে দেয়। গোনাহের কারণে যে মানুষের জ্ঞান ও মুখস্ত শক্তি কমে যায়, এ ব্যাপারে ইমাম শাফেঈ রহমাতুল্লাহির দুটি ঘটনা রয়েছে। আর তাহলো-
– ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুল্লাহ, একদিন মদিনা মুনাওয়ারায় হজরত ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহর সামনে বসা ছিলেন। তখন তিনি ছোট। ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ তাকে দেখেই বুঝতে পারলেন যে, ছেলেটি খুবই মেধাবী ও প্রতিভাবান। তখন তিনি তাকে নসিহত করে বললেন-
‘আমি দেখতে পাচ্ছি আল্লাহ তাআলা তোমার অন্তরে (জ্ঞান) আলো দান করেছেন; অতএব (সাবধান!) তুমি জ্ঞানের এ আলোকে গোনাহের অন্ধকার দিয়ে নিভিয়ে দিও না।’
ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহর এ সতর্কতা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, গোনাহের কারণে মানুষের জ্ঞান লোপ পায়। সুতরাং মানুষের উচিত, গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা। আল্লাহর দেয়া সেরা নেয়ামত জ্ঞানের মর্যাদা দেয়া। গোনাহমুক্ত থাকতে বেশি বেশি তাওবাহ ইসতেগফার করা।
– ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুল্লাহ এক ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমি একবার আমার শিক্ষক হজরত ওয়াকি রাহিমাহুল্লাহুর কাছে দুর্বল মুখস্ত শক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করলাম। জবাবে তিনি আমাকে নসিহত করলেন-
‘আমি যেন গোনাহের কাজ পরিত্যাগ করি। তিনি আরও জানালেন- জেনে রেখো! জ্ঞান হচ্ছে আলো। আর এ আলো আল্লাহ কোনো গোনাহগারকে দেন না।’
মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়ায় নিজেদের জ্ঞান ও মুখস্ত শক্তি বাড়াতে বেশি বেশি নেক আমল করা। গোনাহের কাজ একেবারেই পরিহার করা জরুরি। কেননা গোনাহ মানুষের জ্ঞান ও মুখস্ত শক্তিকে বিলোপ করে দেয়।
তবে গোনাহগারের সাময়িক জ্ঞান দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না, কারণ অনেক গোনাহগার ব্যক্তিও জ্ঞানী হয়ে থাকে। কেননা এ কথার উত্তরে মহান আল্লাহর ঘোষণা রয়েছে। আর তাহলো-
‘আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সেসব নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা করে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৭৫-১৭৬)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। জ্ঞান আলো ও মুখস্ত শক্তি বাড়াতে গোনাহমুক্ত জীবন-যাপন করা এবং বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করা। যেভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাওবার দোয়াগুলো হলো-
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’
নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজেদের জ্ঞান ও মুখস্ত শক্তি ধরে রাখার জন্য বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করার তাওফিক দান করুন। গোনাহমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।