বাইডেনের হোয়াইট হাউস প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে কে এই বাংলাদেশি !!
নাম তাঁর জাইন সিদ্দিকী। প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হোয়াইট হাউস প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর
ইউনিয়নের মাদারীনগর গ্রামে। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে তাঁর নিয়োগ পাওয়ার খবরে গ্রামের মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। চার বছর আগে ২০১৬ সালের এপ্রিলে বাবাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। সবাই বলছেন, জাইন সিদ্দিকী শুধু নান্দাইলের নন, ময়মনসিংহের গর্ব, বাংলাদেশের গর্ব।
গত বুধবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হোয়াইট হাউসের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদেকয়েকজনের নাম ঘোষণা করেন; সেখানে ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার পদে ৩০ বছর বয়সী জাইন সিদ্দিকীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার সরকারের দায়িত্ব নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজন ছুটে আসছে জাইনদের গ্রামের বাড়িতে। তাঁর জন্য শুভ কামনা জানিয়ে গ্রামের মসজিদে দোয়া মাহফিল হয়েছে, বিতরণ করা হয়েছে মিষ্টি।
নান্দাইলের ১০ নম্বর শেরপুর ইউনিয়নের মাদারীনগর গ্রামের মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকী ওরফে মামুন ও হেলেনা সিদ্দিকী দম্পতির একমাত্র ছেলে জাইন সিদ্দিকী। জাইনের দাদা মৃত আবু বকর সিদ্দিকী। মা ঢাকার মেয়ে। মা-বাবা দুজনই চিকিৎসক। ৩২-৩৩ বছর আগে তাঁরা পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই নাগরিকত্ব পেয়ে বসবাস করছেন। সেখানেই জন্ম জাইনের। তাঁদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন দাদি মাজেদা আক্তারও।
গত শনিবার নান্দাইল সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মাদারীনগর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, জাইনদের বাড়িটিকে সবাই চেনে মজিদ মাস্টারের বাড়ি হিসেবে। নরসুন্দা নদীর পারঘেঁষা ওই বাড়ির আরেকটি পরিচিতি রয়েছে, তা হলোবাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের ছোট ভাই আবদুল হাইয়ের শ্বশুরবাড়ি এটি। আবদুল হাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই বাড়ির মৃত আবু বকর সিদ্দিকীর মেয়ের অর্থাৎ জাইনের ফুফু নাহিদ পারভীন মনির। স্বামীর মৃত্যুর পর মনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে জাইনের বাবা সবার বড়।
বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে জাইনের বাবা-ফুফুরা কেউ বসবাস না করলেও বাবার চাচাতো ভাইয়েরা বসবাস করেন। তাঁদের একজন রতন সিদ্দিকী। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, জাইনের বাবা টেলিফোন করে ছেলের জো বাইডেন প্রশাসনেগুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়ার খবর জানিয়েছেন। পদটি কী, তা না বুঝলেও তাঁরা এটা বুঝতে পেরেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশের প্রেসিডেন্টের প্রশাসনে দায়িত্ব পাওয়া অনেক বড় গর্বের, অনেক সম্মানের।
জাইন সিদ্দিকীর আরেক চাচা বাক্কী মিয়া জানান, চার বছর আগে জাইনকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকী। তাঁরা বাড়িতে এক দিন ছিলেন। পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছেন। এরপর কিশোরগঞ্জ যান আরেক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে।জাইনের তিন চাচি বিমলা, লুৎফুন্নাহার ও হেলেনা খাতুন জানান, শেষবার বাবার সঙ্গে জাইন যখন বাড়িতে আসেন, আধাপাকা টিনশেড ঘরে রাত যাপন করেছেন সাদাসিধাভাবে। তখন নিজেরাই (চাচি) রান্না করে তাঁদের খাইয়েছেন।
খেয়েছেন টাকি মাছের ভর্তা, লাউ শাক, ছোট মাছ, দেশি মুরগি ও মাষকলাইয়ের ডাল। এ ছাড়া নানা ধরনের পিঠাপুলিও খেয়েছেন। বাড়ির পাশের নরসুন্দা নদীতে চড়েছেন নৌকায়। এর আগেও আরো দুইবার বাবা, মা ও দাদির সঙ্গে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে আসেন জাইন।
বাড়িটির সামনে রয়েছে একটি মাদরাসা। মাদরাসাটি জাইনের চাচা মাহবুব সিদ্দিকীর নামে। প্রতিষ্ঠা করেছেন দাদা আবু বক্কর সিদ্দিকী। এই মাদরাসার প্রধান মো. আল আমিন জানান, জাইন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হয়েছেন, এই খবর তাঁর বাবা টেলিফোনে জানানোর পর গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদে মিলাদ পড়িয়ে মুসল্লিসহ গ্রামের মানুষকে মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে।
জানতে চাইলে জাইনের ফুফু নাহিদ পারভীন মনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাইন যুক্তরাষ্ট্রে এত বড় একটি পদে নিয়োগপাওয়ায় আমরা সবাই খুব আনন্দিত।’ মনি জানান, পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় জাইনের বাবা, থাকেন নিউ ইয়র্কে। তাঁদের এক ভাই মারা গেছেন। অন্যরা কানাডার মন্ট্রিয়লে বসবাস করেন।
জাইনের বাবা মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকীকে টেলিফোন করলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের গুরুত্বপূর্ণ পদে জাইন নিয়োগ পেয়েছে তার নিজের যোগ্যতায়। এত বড় একটি পদে তার নিয়োগ পাওয়াটা একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের যেমন গর্বের, তেমনি ময়মনসিংহের মানুষের, নান্দাইলের মানুষের পাশাপাশি দেশের সব মানুষেরইও গর্বের। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন, যেন সে তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে দেশের সম্মান আরো বাড়াতে পারে।’
জাইন সিদ্দিকীর বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইয়েল ল স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা জাইন বর্তমানে বাইডেন-কমলা ট্রানজিশন টিমে অভ্যন্তরীণ ও অর্থনৈতিক টিমের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালনকরছেন। তিনি গত বছর কমলা হ্যারিসের ভাইস প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কের প্রস্তুতি টিমের সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি বেটো ও’রোরকের প্রেসিডেনশিয়াল প্রচারদলের ডেপুটি পলিসি ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি সিনেট ক্যাম্পেইন টিমের সিনিয়র
পলিসি অ্যাডভাইজার হিসেবেও কাজ করেছেন। মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এলেনা কাগান, ডিসি সার্কিটির আপিল আদালতের বিচারক ডেভিড ট্যাটেল ও ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট অব ক্যালিফোর্নিয়ার বিচারক ডিন প্রেগের সনের অধীনে ল ক্লার্ক হিসেবেও কাজ করেছেন জাইন। সূত্র: কালের কন্ঠ।