মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত !!
পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শনিবার (৩০ জানুয়ারি) গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ ফলাফল ঘোষণা করেন। এসময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান ছাড়াও বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সামনে থাকা বাটন চেপে এ ফলাফল ঘোষণা করেন। এর আগে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের নিকট থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ফলাফল গ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ফল নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তারা কি কিছু হয়ে গেলে দায়িত্ব নেবেন? এখন এই ফল নিয়েও কথা বলছেন। তবে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, যে সবাই মিলে ফলটা তৈরি করতে পেরেছে।’ আজ শনিবার (৩০ জানুয়ারি) গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল ঘোষণা করে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে একটি বিষয়ে ফেল করলে পরের বছর সব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। সেটি আমরা পরিবর্তন করে দিয়েছি। ফলে সে ওই একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারে। তখনও অনেকে সমালোচনা করে। আজকেও আমরা যেভাবে ফল দিলাম, এতে আশা করি সবার ভালো হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে হচ্ছে জেলখানায় বন্দি আছি। ভাগ্যিস আমরা ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করতে পেরেছি। এতে আমরা সবকিছু করতে পেরেছি। ইতিমধ্যে আমরা ভ্যাকসিন এনেছি। আমরা ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি। শিক্ষক বা শিক্ষার সঙ্গে যারা কর্মরত, তাদের যাতে দ্রুত দেওয়া হয় তা বলে দিয়েছি। আমরা ফেব্রুয়ারি মাসটা দেখবো। ফেব্রুয়ারি যদি ভালো থাকে, তাহলে পরবর্তী মাসে আমরা সীমিত পরিসরে শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিতে পারবো বলে আশা করি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এবার সবাই ফলাফল তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞসহ সবার মতামত নিয়ে এই ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। এটা অনেক কঠিন কাজ ছিল। শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে এক বছর নষ্ট হোক আমরা চাই না। সেজন্য এই ফলাফলটা আমরা দিলাম। করোনা আমরা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। এটা থেকে মুক্তি পেলে আবার সবাই ক্লাসে ফিরতে পারবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেকে এটা নিয়ে কথা বলছেন। এভাবে তিক্ততা তৈরি করা ঠিক না। এটি নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করলে শিশুদের মনে মানসিক চাপ পড়বে। করোনাকালের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস করা হয়েছে, যাতে তাদের পড়াশোনা চলতে পারে। এসব ক্লাস বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমেও দেওয়া হয়েছে।’
এইচএসসির ফল পেতে শুরু হয়েছে প্রি-রেজিস্ট্রেশন। রেজিস্ট্রেশন করে ঘরে বসেই শিক্ষার্থীরা ফল সংগ্রহ করতে পারবেন। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করার আহ্বান জানিয়েছে টেলিটক। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলের প্রি-রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন করতে হবে মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে। প্রি-রেজিস্ট্রেশন করতে HSC লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নাম দিয়ে স্পেস দিয়ে রোল লিখে স্পেস দিয়ে ২০২০ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠিয়ে দিতে হবে।
ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রি-রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বরে ফলাফল পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া ওয়েবসাইট (www.educationboardresults.gov.bd) থেকে ফল দেখা যাবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকেও ফল জানা যাবে।
উল্লেখ্য,২০২০ সালে ১১ শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ শিক্ষার্থীর এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১লা এপ্রিল থেকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনীর মতো এইচএসসি পরীক্ষাও নেওয়া যাচ্ছে না। গত ৭ই অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসির ফলাফলের গড় করে ২০২০ সালের এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে। জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষিত হবে।
কিন্তু আইনে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশের বিধান থাকায় তা সংশোধন করে বিশেষ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা ছাড়াই ফল প্রকাশের বিধান যুক্ত করতে হয়েছে, যা গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদের অনুমোদন পায়। গেল বছরের পহেলা এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা। কিন্তু তার আগেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ায় স্থগিত হয়ে যায় পরীক্ষা। শেষপর্যন্ত পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হওয়ায় অটোপাশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অটোপাশের ক্ষেত্রে, অষ্টমের সমাপনী এবং মাধ্যমিকের ফলাফলের গড় করে ২০২০ সালের এইচএসসির ফল নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।