মিয়ানমারের সেনাপ্রধান কে এই জেনারেল মিন অং হ্লাইং ??
মিয়ানমারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। দেশটির রাজনীতির ওপর সামরিক বাহিনীর শক্ত নিয়ন্ত্রণ বহু যুগ ধরেই।সত্তরের কাছাকাছি বয়স হলেও সামরিক বাহিনীর প্রধানের পদ থেকে তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে, কিন্তু তিনি সেই মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে নিয়েছেন। খবর বিবিসির।
সৈনিক জীবনের শুরুতে একজন ক্যাডেট হিসেবে তিনি খুব চোখে পড়ার মতো কেউ ছিলেন না। ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত আইন পড়েছিলেন মিন অং হ্লাইং।তার সহপাঠীরা জানান, তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী এবং সাধারণত নিজেকে আড়ালে রাখতেই পছন্দ করতেন।তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন মিয়ানমারে রাজনৈতিক তৎপরতা খুব ব্যাপক ছিল। কিন্তু মিন অং হ্লাইং এসব থেকে দূরে থাকতেন।
অন্য ছাত্ররা যখন বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন, তখন তিনি প্রতি বছর ডিফেন্স সার্ভিসেস একাডেমি নামে সামরিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন।তিন দফা চেষ্টার পর তিনি সফল হন ১৯৭৪ সালে। তার এক সহপাঠী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ক্যাডেট হিসেবে তিনি ছিলেন গড়পড়তা ধরনের।
তার প্রমোশন হচ্ছিল ধীরগতিতে, তবে নিয়মিতভাবে। তবে যখন অফিসার কোরের মাঝারি স্তর ছাড়িয়ে মিন অং হ্লাইং আরও ওপরে উঠে গেলেন, তখন বেশ বিস্মিত হয়েছিলেন তার সহপাঠীরা।গণতন্ত্রের পথে মিয়ানমারের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে, তিনি সামরিক বাহিনীর প্রধান হন সে বছরই।
ইয়াঙ্গুনের কূটনীতিকরা জানান, ২০১৬ সালে যখন অং সান সু চির দল প্রথমবার ক্ষমতায় আসে, তখন মিন অং হ্লাইং একজন স্বল্পভাষী সেনা থেকে নিজেকে একজন রাজনীতিবিদ ও পরিচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করেন।তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, সম্মানিত অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বৌদ্ধ আশ্রমে সফর ইত্যাদি ফলাও করে প্রচার হতো তার ফেসবুক পাতায়। তার ফলোয়ারের সংখ্যা ছিল কয়েক লাখ।
কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে সেই পাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।ওই অভিযানের ফলে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা ওই অভিযানের সময় গণহত্যা, গণধর্ষণ, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ঘটেছে বলে অভিযোগ আনেন।
মিন অং হ্লাইংসহ চারজন সামরিক নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকরা বলেন, জেনারেল মিন অং হ্লাইং বিভিন্ন দেশে সংঘটিত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং লিবিয়া বা অন্য কিছু মধ্যপ্রাচ্যের দেশের মতো পরিস্থিতি যেন মিয়ানমারে না হয়, তার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্ব দিতেন।
মিয়ানমারের পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর ২৫ শতাংশ আসন এবং অং সান সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার ওপর সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা– এগুলো পরিবর্তন করার কোনো ইচ্ছা তার আছে– এমন কোনো ইঙ্গিত কখন্ও দেননি মিন অং হ্লাইং।