মাত্র ৩০ হাজার টাকার বেতনে , ব্যাংকের লেনদেন শত কোটি টাকা!
তিনি রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উপ -সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন। এই তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী, যিনি নন-এমপিও হিসেবে নিযুক্ত, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রশাসনিক কাজও করেন। তিনি মোট ৩০ হাজার টাকা বেতন পান। অতিরিক্ত কাজের জন্য তিনি আরও কিছু ভাতা পান। কিন্তু তার ব্যাংকে ১০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
একটি বা দুটি নয়, ৯৮ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। তিনি ঢাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক এবং দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। অভিযুক্তের নাম আতিকুর রহমান খান। স্কুল ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তার নিজস্ব তদন্তে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
আতিকুর রহমান খান এই বিশাল সম্পদের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে তিনি নিজেই ফোন করে এই প্রতিবেদককে বলেন যে তিনি আইডিয়াল স্কুলে যোগদানের আগে থেকেই ব্যবসা করছেন। ব্যবসা করে তিনি ভাগ্যবান হয়েছেন।
জানা গেছে, গাজীপুরের কালীগঞ্জের বাসিন্দা আতিকুর রহমানের বাবা একজন কৃষক। আইডিয়াল স্কুলে যোগদানের আগে তিনি কনকর্ড নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে কাজ করতেন। আইডিয়াল স্কুলে ভর্তির বাণিজ্যে জড়িত হয়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
আতিকুর রহমান খানের ৯৭ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দেশের ১৫ টি ব্যাংকে পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলো হলো আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড।
এর মধ্যে আতিকুর রহমানের মালিকানাধীন কোম্পানি, স্ত্রী নাহিদা আক্তার নীপা, বড় ভাই আব্দুস সালাম খান, ফজলুর রহমান খান এবং শ্বশুর নুরুল ইসলামের নামে লেনদেন রয়েছে। আতিকুরের বড় ভাই আব্দুস সালাম মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের বাংলা মিডিয়াম দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালে আতিকুর রহমান খানের মালিকানাধীন ন্যাশনাল ফ্রাইড চিকেনের নামে সাউথইস্ট ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। এর ফলে প্রায় 2 কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু আফতাবনগরে সেই প্রতিষ্ঠানের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়া আতিকুর রহমান খানের মালিকানাধীন এইচ কে খান এন্টারপ্রাইজের নামে প্রাইম ব্যাংক হিসেবে কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। সংগঠনের ঠিকানায় বনশ্রী মসজিদ মার্কেটের বিশ্বাস লাইব্রেরি পাওয়া গেল।
ভর্তি বাণিজ্য একটি বিশাল সম্পদ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে যোগদানের পর থেকে আতিকুর রহমান খান ভর্তির ব্যবসা করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শাখা ছাড়াও মুগদা ও রামপুরায় দুটি পৃথক শাখা রয়েছে। এই বিদ্যালয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রভাতী ও দিবার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় এবং প্রভাতী ও দিবা শাখায় ইংরেজি সংস্করণে প্রতি বছর ভর্তি হয়। প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা এখানে টাকার জন্য ভর্তি হয়। আতিকুর রহমান খান অবৈধ ছাত্র ভর্তি সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন শাখায় এ বছর ৩০০০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। টাকার বিনিময়ে শত শত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আতিকুল ইসলাম খান প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য ৫ লাখ টাকা নিতেন। এই প্রতিবেদকের কাছে তিন অভিভাবক ভর্তির বিষয়টি টাকার মাধ্যমে স্বীকার করেছেন। এছাড়া আতিকুর রহমান খানের দালালের সাথে ভর্তির বিষয়ে কথোপকথনের কিছু রেকর্ড রয়েছে এই প্রতিবেদকের কাছে।
টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে আতিকুর রহমান খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি অবৈধ ভর্তি বাণিজ্যে জড়িত নন।
তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, শিক্ষার্থীরা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধভাবে ভর্তি হয়েছে। আতিকুর রহমান মন্তব্য করেন, ‘যারা স্কুলে অবৈধভাবে ভর্তি হয়েছে তাদের তালিকা ও রেজুলেশন আছে। আপনি জানতে পারেন যে তারা কার সুপারিশে ভর্তি হয়েছে। আমি জড়িত নই।