অটুট থাকবে দু’দেশের সম্পর্ক: মমতার সঙ্গে বৈঠকের পর শেখ হাসিনা !!

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ-ভারতের প্রথম দিন-রাতের ম্যাচ ঘণ্টা বাজিয়ে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কলকাতার ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়ামে শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে এ ঐতিহাসিক টেস্টের সূচনা করেন তারা।

পরে সন্ধ্যায় দুই নেত্রী একান্তে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা লাভের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। তখন এক কোটি বাংলাদেশিকে ভারতবাসী আশ্রয় দিয়েছিল। তাই আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা রয়েছে। আমরা পাশাপাশি থাকি, দু’দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রয়েছে। এই সম্পর্ক আরও অটুট ও নিবিড় হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

আর মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘কথা হয়েছে ঘরোয়া পরিবেশে। দুই দেশের নানা বিষয় নিয়ে সৌজন্যমূলক আলোচনা হয়েছে। ওনাকে ফের কলকাতা আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’

খেলার মাঠেই মমতার সঙ্গে দু’দফায় দেখা ও কথা হয়েছিল শেখ হাসিনার। পরে সন্ধ্যায় মোট ৫৪ মিনিট বৈঠক হয়। এরপর ২৯ মিনিট রুদ্ধদ্বার একান্ত বৈঠকে ছিলেন দুই নেত্রী। তার আগে ২৫ মিনিটের যে বৈঠক হয় সেখানে দুই নেত্রী ছাড়াও ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা দাস গাঙ্গুলী ও পশ্চিমবঙ্গের পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

প্রকাশ্য বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন বা পাসপোর্ট সরলীকরণ, সীমান্ত বাণিজ্য বা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে কোনো কথা হয়নি। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা দুই নেত্রীর তা কেউই প্রকাশ করেননি। বিশেষ করে তিস্তা নিয়ে কী কথা হল- সব সাংবাদিকের এই প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে গেছেন দু’জনই। তবে ক্রিকেট নিয়ে সহাস্য ছিলেন শেখ হাসিনা। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বাঙালি সভাপতির প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সৌরভের আমন্ত্রণে কলকাতায় এসেছি। কিন্তু ক্রিকেট খেলায় আজ আমাদের টিম মাঠে খুব একটা ভালো করতে পারেনি। আমরা আগামী দিনে আরও ভালো খেলার চেষ্টা করব।’

সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের সূচনা অনুষ্ঠানে মমতাকে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। আগামী বছর এ কর্মসূচি শুরু হবে।’

গোলাপি টেস্টের উদ্বোধন : শেখ হাসিনা ও মমতা যখন ঘণ্টা বাজিয়ে ঐতিহাসিক টেস্টের উদ্বোধন করেন তখন পাশে ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এ সময় সেখানে ছিলেন। ছিলেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের খেলোয়াড়রাও। শচীন টেন্ডুলকার, কপিল দেব, ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো ক্রিকেটাররাও উপস্থিত ছিলেন।

পরে সৌরভ বলেন, ‘উপমহাদেশের এ ঐতিহাসিক ম্যাচ দুই বাংলার দুই শীর্ষ নেত্রীর হাত দিয়ে সূচনা হওয়াটা একটা মাইলস্টোন। এ মুহূর্তটা আমাদের সবার কাছে খুবই গর্বের।’ আর শেখ হাসিনা-মমতাকে মাঠে পেয়ে খুশি ছিলেন শচীনের মতো তারকাও।

৮৫ বছরের পুরনো ইডেন গার্ডেনে শেখ হাসিনা প্রবেশ করেন দুপুর সাড়ে ১২টায়। সেখানে তাকে বরণ করে নেন মমতা ও সৌরভ। মাঠে ঢুকেই শেখ হাসিনা প্রায় ৭০ হাজার দর্শকের উদ্দেশে হাত নাড়েন। তখনই করতালি দিয়ে সবাই বঙ্গবন্ধুকন্যাকে স্বাগত জানান। এ ম্যাচ ও পরিবেশ নিয়ে আবেগাপ্লুত ছিলেন তিনি। বিশেষ করে উপমহাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে তার হাত দিয়ে এমন ঐতিহাসিক ম্যাচ শুরু হওয়ায় তিনি ছিলেন খোশমেজাজে। তবে পরে মুমিনুলরা ভালো খেলতে না পারায় তিনি লুকাতে পারেননি হতাশাও।

দুটি আলাদা সিংহাসনে বসানো হয় দুই নেত্রীকে। পাশের চেয়ারে বসেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার ও বিসিসিআই সচিব জয় শা। দুই নেত্রীর সম্মতি নিয়েই সোনার কয়েনের টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক।

কলকাতায় প্রথম দিন-রাতের টেস্টে মাঠে ছিল তারকার সমাবেশ। খেলা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ভরে গিয়েছিল ইডেনের গ্যালারি। গোলাপি টেস্ট ঘিরে উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। চা ব্রেকের সময় মাঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রুনা লায়লা ও মুম্বাইয়ের জিৎ গাঙ্গুলি। রুনা দুটি বাংলা ও একটি হিন্দি গান গেয়ে শোনান।

খেলা শুরুর আগে মাঠে গিয়েই দু’দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে পরিচিত হন শেখ হাসিনা ও মমতা। পরে ক্লাব হাউজের ভিআইপি বক্সে বসে খেলা দেখেন প্রধানমন্ত্রী। তার পাশে বসেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার ও সৌরভ গাঙ্গুলী। এরপর ইডেনের ক্লাব হাউজেই মধ্যাহ্নভোজ সারেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তখন মমতার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়।

সন্ধ্যার বৈঠকের পর রাত ৮টায় ফের ইডেন গার্ডেনে যান শেখ হাসিনা ও মমতা। তারা দুই দেশের ক্রিকেটার ও বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা দেন। সেখানে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, পিভি সিন্ধু, সানিয়া মির্জা, আজহার উদ্দিন, কপিল দেব, মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রমুখ।

বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে কলকাতার স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কলকাতার মেয়র এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নগর উন্নয়ন ও পৌরসভা বিষয়ক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস ও বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রাসহ কলকাতার হোটেল তাজ বেঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী রাত ১০টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। ফ্লাইটটি রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *