অবৈধ মালয়েশীয়া প্রবাসীদের জন্য জরুরি বার্তা !!

মালয়েশিয়া আজ ১লা জানুয়ারি প্রথম দিন থেকেই মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন ও পুলিশ বিভাগ শুরু করেছে মালয়েশিয়া জুড়ে সাড়াশি অভিযান। প্রবাসী বাংলাদেশি ভাইদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে রাখতে অনুরোধ করা হলো।

অপ্রয়োজনীয় ঘুরাঘুরি থেকে বিরত থাকুন।আগামী কিছুদিন পরিস্থিতি গরম থাকবে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান আগেই বলছিলেন B4G শেষে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করবে।

সতর্কতাঃ কোন প্রবাসী ভাই কাগজপত্র নেই তারা অবশ্যই সাবধানে চলবেন কাগজপত্র থাকলেও সাথে রাখবেন।

মালয়েশিয়ায় কারও কপাল খুলবে কারও পুড়বে

প্রবাসে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের নিয়ে পুরো বছরটিতে অনেক নাটক হয়েছে। শুধু নাটকই নয়, সিটিং-ফিটিং আর মারিং-কাটিংদের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এই যোদ্ধারা।

মালয়েশিয়া প্রবাসী হারুন মিয়া বলেন, ‘একজন অভিবাসী ইচ্ছে করে অবৈধ হয় না। দালাল চক্রই তাকে অবৈধ করে। বৈধ করার আশ্বাসে একজন শ্রমিকের কাছ থেকে পাসপোর্ট ও টাকা নিয়ে উধাও হয়। তখন এই শ্রমিকের আর কিছু করার থাকে না। উদাহরণস্বরূপ আমি নিজেই। ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় ফেরারি হিসেবে কাজ করি’।

তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশি দু’জন দালালের কাছে টাকা দিয়ে পারমিট করতে পারিনি। পরে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ান একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মাধ্যমে বৈধ হতে পেরেছি। আমাদের বাংলাদেশি শ্রমিকরা যদি দালালের কাছে না গিয়ে দূতাবাসের পরামর্শে ভালো কোম্পানিতে বৈধতা নিত তাহলে আর এ ধরনের সমস্যা হত না’।

২০১৬ সালে ‘রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় মালয়েশিয়া সরকার। প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৮ সালে। প্রতি অভিবাসীর কাছ থেকে ৬ হাজার রিঙ্গিত যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা নেয়। এ প্রকল্পে সাড়ে পাঁচ লাখ অবৈধ বাংলাদেশি নিবন্ধিত হয়েছিলেন বৈধ হওয়ার জন্য। এর মধ্যে নিবন্ধিত প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার শ্রমিকের ভিসাসহ বৈধতার বিষয়টি বিবেচনায় থাকলেও প্রতারিত হয়ে অনেকে ভিসা পাননি।

এমনকি অভিযোগ করেও পরবর্তীতে তাদের টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। টাকা দিয়েও এসব অভিবাসীরা বৈধতা পাওয়া তো দূরের কথা তাদের পাসপোর্টও হারিয়েছে। টাকা আর পাসপোর্ট ভেন্ডর হজম করে ফেললেও বিষয়টি নিয়ে সরকার কোনো দায় নিতে চায় না। আবার ভেন্ডররাও সরকারের ওপর দায় চাপাচ্ছে।

এদিকে অভিবাসী হয়রানির শিকার হলেও তাদের দায় না নিয়ে উল্টো অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরাতে গত ১ আগস্ট থেকে শুরু করেছে ব্যাক ফর গুড কর্মসূচি। আর এ কর্মসূচি শেষ হতে আর মাত্র একদিন বাকি। এ কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক দাতুক খায়রুল দাজাইমি দাউদ বলছেন, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কোম্পানি ও এজেন্টদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে। মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসের ইমিগ্রেশন বিভাগ জানুয়ারি ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ হাজার ৫৯৫টি অভিযানে প্রায় দশ হাজার বাংলাদেশিসহ ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩১৬ অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার হয়েছে।

এ ছাড়া অবৈধদের পাশাপাশি বিদেশি অভিবাসীদের অর্থ প্রদান বা অবৈধভাবে কাজে নিয়োগ দেয়া এমন ১ হাজার ২১৬ নিয়োগকারীকেও গ্রেপ্তার করেছে অভিবাসন বিভাগ।

অবৈধ অনুপ্রবেশ ও দেশটিতে অবৈধদের বসবাস ঠেকাতে বিভাগটি কাজ করছে এবং দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌম রক্ষায় কোনো পক্ষের সঙ্গে আপস করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অভিবাসন বিভাগের প্রধান।

পুরনো বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরে স্বপ্ন দেখছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। জানুয়ারি থেকেই বিদেশি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সর্বনিম্ন ১২০০ রিঙ্গিত (২৪ টাকা) কার্যকর হচ্ছে। এই বেতন কার্যকর করা হবে ৫৭টি সিটি কর্পোরেশনের অধীনে। তবে পর্যায়ক্রমে সব সিটিতে বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।

১৮ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী ২২ হাজার টাকা বেতনে চলা কষ্টের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের সরকার জনগণের কথা বিবেচনায় এনে বেতন বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে যেখানে সর্বনিম্ন বেতন ছিল ২০ হাজার টাকা। আমাদের সরকারের প্রথম বছরেই আমরা ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি করেছিল এবং জানুয়ারি ২০২০ থেকে সেটা ২৪ হাজার টাকা কার্যকর করা হবে।

এদিকে বেতন বৃদ্ধির ফলে বিদেশি অভিবাসীদেরও একই মজুরি কার্যকর হবে। বিগত দিনে যেখানে একজন শ্রমিকের বেসিক বেতন ছিল ২২ হাজার টাকা। জানুয়ারি থেকে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ হাজার টাকা হবে।

এফএমএম-এর সভাপতি দাতুক সোহা থিয়ান লাই বলছেন, শ্রমিকদের অর্থ সঞ্চয়, পালিয়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষা, স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক বিনিময় হ্রাসের মতো কিছু ইতিবাচক ফলাফল হতে পারে। তবে আরও কিছুদিক বিবেচনা করা উচিত।

১৮ ডিসেম্বর বিবৃতিতে জানান, কর্মীদের অবদান হিসেবে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আইন সংশোধন করা উচিত। এদিকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বমানে রূপ দিতে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির অভিবাসন বিভাগের প্রধান দাতো খায়রুল দাজাইমি দাউদ।

তিনি বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগকে বিশ্বমানে রূপ দিতে তিনটি রূপরেখা দিয়েছেন। এ রূপরেখায় রয়েছে সার্ভিস ম্যানের মান উন্নত করা, অবৈধ অভিবাসীদের দমনে অভিযান আরও তীব্র করা এবং অভিবাসন তথ্য ব্যবস্থা উন্নীত করার দিকে নজর দেওয়া।

মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, সরকার শ্রম মাইগ্রেশন খরচ সীমাবদ্ধতার মধ্যে ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

মালয়া ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক মো. খালেদ শুকরান বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মাইগ্রেশন খরচ বিশ্বের সর্বোচ্চ এবং বেতন পরিসীমা সর্বনিম্ন। অভিবাসন খরচ কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ না করা পর্যন্ত অভিবাসী পরিবারের সুবিধা হবে না। বাংলাদেশি অভিবাসীরা কম টাকা উপার্জন করে এবং তাদের বেশিরভাগ উপার্জন পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয় বহন করতে ব্যয় করে। শুধু তাই নয়, দেশের অর্থনীতির চাকাকে তারা সচল রেখেছে। তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখভালের দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়।

২০২০ সালে বৈধ কর্মীদের জন্য হতে পারে অপার সম্ভাবনাময় একটি বছর আর অবৈধদের হতে পারে দুশ্চিন্তায় কপাল কুচকে যাওয়ার বছর। ২০১৯ সালকে নিয়ে করা হিসাবের যোগ-বিয়োগের বাস্তব ফল যাই হোক তবে এটি সত্য যে, অবৈধদের জন্য মালয়েশিয়ায় বসবাসের সুযোগ দিনেদিনে কেবল সংকুচিত হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *