ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ায় স্বামীকে মেরে ফেললো স্ত্রী !!

মেয়েটির বয়স মাত্র ১৪ বছর। আর ছেলেটির বয়স ২৮ বছর। পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু ২৭ দিনের মধ্যেই শীর্ণকায় দেহের মেয়েটি, সুঠাম দেহের ছেলেটিকে কৌশলে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায় পুলিশের কাছে এবং আদালতে স্বীকার করেছে।মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বিষহরা গ্রামের এই ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় আদালত মেয়েটিকে কারাগারে পাঠিয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, নিহত হারুনুর রশিদ ওই গ্রামের বয়জুল মণ্ডলের ছেলে। আর মেয়েটি একই উপজেলার ভীমনগর পালশা গ্রামের এর মেয়ে। স্থানীয় একটি মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত মেয়েটি। গত ১৯ মার্চ হারুনের সাথে তার বিয়ে দেয়া হয়। বয়স কম বলে হারুনের গ্রামে ওই কিশোরীর খালার বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় একজন কাজী বিয়ে পড়ান।

মোহনপুর থানার ওসি তৌহিদুর রহমান বলেন, অনেকটা জোর করেই তার বিয়ে দেয়া হয়েছিল নববধূর। বিয়ের পর স্বামীর যৌ’ন চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। গত মঙ্গলবার রাতেও স্বামী তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চান। তখন মেয়েটি জানায়, তার শারীরিক সমস্যার কথা। তখন স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন হারুন। পরে গৃহবধূ কৌশলে স্বামীর দুই হাত বেঁধে ফেলে। এরপর পাটের রশি গলায় পেঁচিয়ে ধরে। আর এতেই দ্রুত তার স্বামীর মৃত্যু হয়।

ওসি তৌহিদুর রহমান আরও বলেন, স্বামীর হাতে যৌ’ন নিপীড়নের শিকার হয়েই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বাল্যবিয়ের শিকার ওই নববধূ। মেয়েটির চেয়ে ছেলের শারীরিক গঠন দ্বিগুণ। তারপরও সে স্বামীকে হত্যা করতে পেরেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এর আগে নিহত হারুনের বাবা মেয়েটির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন বলেও জানান ওসি।

ভীমনগর পালশা গ্রামে বাড়িতে মেয়েটির বাবা জানান, তারও বাল্য বিয়ে হয়েছিল। বর্তমানে তার বয়স ৩০ বা ৩১ বছর হবে। তার দুই মেয়ে। ১৪ বছরের বড় মেয়েটির বাল্য বিয়ে দেয়া হয়। তার ছোট মেয়েটির বয়স তিন বছর। তবে তিনি (মেয়েটির বাবা) স্বীকার করেন, এই বয়সে মেয়ের বিয়ে দেয়াটাই ঠিক হয়নি।

নিহত হারুনের বোন সুমাইয়া খাতুন জানান, রাত ১ টা নাগাদ তার ভাইকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। রাত ৩ টা পর্যন্ত হারুনের স্ত্রী লাশের সঙ্গেই ছিল। ৩ টার দিকে সে শ্বাশুড়ির সঙ্গে সেহরি রান্না করতে আসে। রান্না শেষ হলে সে একাই খেতে বসে। তখন তার শ্বাশুড়ি ছেলেকে ডাকতে বলেন। কিন্তু মেয়েটি যায়নি। তখন হারুনের মা তাকে ডাকতে যান। গিয়ে দেখেন- গরমের মধ্যে হারুনের শরীর কম্বল দিয়ে ঢাকা। কম্বল সরিয়ে দেখেন, হারুনের কোন সাড়াশব্দ নেই। এ সময় তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। তখন চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এই বিয়েটি পড়িয়েছিলেন মোহনপুরের জাহানাবাদ ইউনিয়নের সহকারী কাজী আবুল হোসেন শেখ। তিনি বিষহরা উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ঈমামও। মোবাইলে আবুল হোসেন প্রামানিক বলেন, তিনি এই বিয়ে পড়াতে চাননি। এক ভাতিজা এসে পীড়াপীড়ি করায় শুধু কালেমা পড়িয়েছেন। মেয়ের বয়স কম হওয়ায় রেজিস্ট্রি করেননি। ভালাম বইয়েও কিছুই লেখা নেই। তিনি বলেন, বিয়ে পড়ানোটা একটা অন্যায় হয়েছে। ভুল হয়েছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *