এই বুঝি ২শ হলো পেঁয়াজের কেজি !!

ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে বেশ কিছু দিন থেকে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিকল্প উৎস মিয়ানমার, মিসর, চীন, তুরস্ক এমনকি পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব উদ্যোগের ফলে দাম কমে আসবে বলে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু বাস্তবতা হলো- কোনোভাবেই পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গততকালের চেয়েও আজ দেশি পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৯০ টাকায়। আর মিয়ানমারের পেঁয়াজ একদিনের ব্যাবধানে ৪০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিশরের বড় বড় আকারের পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কাপ্তান বাজার, রায়ের বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

পেঁয়াজের এমন লাগামহীন দামে ক্ষোভ ক্রেতাদের মাঝে। পেঁয়াজের বাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করছেন সে প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকা দরে পেঁয়াজ কেনার পরেও দেশে কোন অজুহাতে এত দাম? সে প্রশ্নও ক্রেতাদের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান তাদের।

বিক্রেতাদের দাবি, তাদের বেশি দামে কিনতে হয় বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতার বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর দফতরে যান সাংবাদিকরা। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন, আর বাণিজ্য সচিব এ বিষয়ে গাণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি।

রাজধানীর কাপ্তান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে ১৯০ কেজিতে পেঁয়াজ কিনলাম। আসলে পেঁয়াজ খেতে হয়, তাই খাই। নচেত যে অবস্থা, খুব খারাপ, শোচনীয় অবস্থা। আগে সপ্তাহে অন্তত দুই কেজি কিনতাম, এখন সেটি কামিয়ে ১ কেজিতে নিয়ে এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজার কে নিয়ন্ত্রণ করছে, জানি না। তবে দিনে দিনে পেঁয়াজের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে করে আমরা অতীষ্ট। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে কাপ্তান বাজারের পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজকে শ্যাম বাজার থেকে ১৭৫ টাকা কেজি করে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে এসেছি। বিক্রি করছি খুচরা ১৯০ টাকা এবং পাইকারিতে ১৮৫ টাকা করে।’

তিনি বলেন, ‘গতকালকে বার্মার পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১৪০ টাকা করে। আজকে শ্যামবাজারে বার্মার পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি। তাই বাংলাদেশি-টা নিয়ে এসেছি। পাইকারিতে শ্যমাবাজারেই ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে’, বলে জানান তিনি।

মনোয়ার হোসেন বলেন, শ্যামবাজারে আজকে মিশরের পেঁয়াজও পাওয়া যায়নি। আজকে বাজারে পেঁয়াজের পরিমাণ খুব কম বলেও জানান এ পেঁয়াজ বিক্রেতা।

কাপ্তান বাজারের আরও এক পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা বাবলু বলেন, ‘মিশরের বড় বড় সাইজের পেঁয়াজ আজকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। আর বার্মানটা বিক্রি করছি ১৮০ টাকা কেজি। গতকালকের চেয়ে আজকে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিকে গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সর্বশেষ প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ৩৫টি ট্রাক বসিয়ে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছিল সংস্থাটি।

একজন ক্রেতা এক কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারছিলেন। আর ট্রাক সেলের ডিলার পাচ্ছিলেন প্রতি দিন এক টন করে পেঁয়াজ। অর্থাৎ দিনে একটি ট্রাক থেকে প্রায় এক হাজার পরিবারের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হচ্ছিল।

তবে চলতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার সপ্তাহিক ছুটির কারণে বিক্রি বন্ধ ছিল। রোববার ছিল সরকারি ছুটি। তাই এই তিন দিন টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ ছিল। তবে সোমবার বিক্রি হয়।

এ ছাড়া সরবরাহ ঘাটতির কারণে মঙ্গলবার পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেনি টিসিবি। তবে গতকাল বুধবার এবং আজ বৃহস্পতিবার আবার পেঁয়াজ বিক্রি করা শুরু করেছে টিসিবি।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। পাশাপাশি মিসর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। সম্প্রতি মিয়ানমারও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি করে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *