এবার বিরল ঘটনা, সাগর থেকে কক্সবাজার সৈকতে উঠে এলো তিমি !!

করোনাভা’ইরাস সঙ্কটের কারণে মানুষের বিচরণ কমে গেছে সর্বত্র। সাগরে বড় জাহাজ ও নৌকা চলাচল বন্ধ। সেই সঙ্গে কমেছে মাছ ধরা ট্রলারের চলাচল। এমন সুযোগে বঙ্গোপসাগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণি। কিছুদিন আগে কক্সবাজার সৈকতে দেখা গেছে বিরল প্রজাতির ডলফিনের খেলা। এবার পর্যটকশূন্য কক্সবাজার সৈকতে দেখা গেল তিমি।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বড়ডেইল এলাকার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন মারিশ বুনিয়ায় দেখা গেছে, ছোট আকারের একটি তিমি। ব্রিডস হোয়েল প্রজাতির এই তিমি খেলতে খেলতে সমুদ্র সৈকতে এসে আটকা পড়ে। এটিকে স্থানীয়রা অচেনা প্রজাতির ডলফিন ভেবে সাগরে ফিরিয়ে দেয়।গত ১৪ জুন গভীর সাগর থেকে সমুদ্র সৈকতে উঠে আসে এই তিমি। প্রথমে সবার ধারণা ছিল ডলফিন বা বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। ভিডিও দেখে রোববার (২১ জুন) জাগো নিউজকে প্রাণি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি ব্রিডস হোয়েল তিমি।

সেভ দ্য ন্যাচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ১৪ জুন টেকনাফ সৈকতে এই তিমি দেখে ডলফিন ভেবে আমাকে ফোন করে জানান আমাদের সংগঠনের টেকনাফ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন চৌধুরী। কিন্তু ধারণকৃত ভিডিও রোববার সংগ্রহ করে পাখা এবং পেট দেখে আমরা নিশ্চিত হই এটি ডলফিন নয়; ব্রিডস হোয়েল তিমি। তার পাখা, লাল পেট ও মাথার পাশ দিয়ে শ্বাস ফেলার ভিডিওটি প্রাণী বিশেষজ্ঞদের দেখানো হয়। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন এটি সামুদ্রিক তিমি। যাকে ব্রিডস হোয়েল বলা হয়।

তিনি বলেন, তবে এটি বাচ্চা তিমি। সাগরের কিনারে বাচ্চা তিমির উপস্থিতি বলে দেয় মা তিমি আশেপাশেই রয়েছে। এজন্য সাগরে থাকা সবার সতর্ক হওয়া উচিত।পরিবেশ সাংবাদিক হোসেন সোহেল বলেন, আমি বেশ কয়েকবার বঙ্গোপসাগরের সোয়াস অব নো গ্রাউন্ডে গেছি সংবাদের প্রয়োজনে। সবশেষ দুই বছর আগে একটি তিমি পরিবার দেখেছি সেখানে। সেখানে দেখে আসা তিমির সঙ্গে টেকনাফ উপকূলে আসা তিমির মিল রয়েছে। যদিও সোয়াস অব নো গ্রাউন্ড টেকনাফ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। হয়তো খেলতে খেলতে চলে এসেছে এই তিমি।

ওয়ার্ল্ড লাইফ কনজারবেশন সোসাইটির সাবেক মেরিন প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুপ্রিয় চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, এটি তিমি। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন অংশের বেল্টে তিমি অবস্থানের রেকর্ড আছে। ২০১৮ সালের সার্ভেতে এখানে তিমি পাওয়ার রেকর্ড আছে। এই তিমির নাম ব্রিডস হোয়েল (Bryde’s Whale)। সৈকতে জীবিত তিমি আসার রেকর্ড নেই। তবে এবার সৈকতে আসার রেকর্ড হলো।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ জাগো নিউজকে বলেন, ভিডিও দেখে নিশ্চিত হয়েছি এটি তিমি। প্রাপ্তবয়স্ক একটি তিমি প্রায় ৩০-৪০ ফুট লম্বা হয়। টেকনাফের এটি ১০ ফুটের মতো লম্বা হবে।অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, চলমান করোনা সঙ্কটের কারণে সাগরে জাহাজ, নৌকা ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। মানুষের উপস্থিতি না থাকায় তিমিটি সৈকতে চলে আসছে। করোনাকালে আমরা দেখেছি; সব প্রাণি মানুষের অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের মতো বিচরণ করছে। এর আগে ডলফিন এসেছিল সৈকতে। একটু স্বস্তি পেলে প্রাণিরা যে তাদের মতো চলতে পারে এই তিমির আগমন তারই প্রমাণ।

সূত্র- জাগো নিউজ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *