করোনাভাইরাসে কাঁপছে বিশ্ব, করোনা প্রতিরোধে কঠোর সিঙ্গাপুর !!

করোনাভাইরাসে কাঁপছে বিশ্ব। চীনের উহান শহর থেকে এ ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সিঙ্গাপুরে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২৩ জানুয়ারি। তিনি ২০ জানুয়ারি চীনের উহান শহর থেকে সিঙ্গাপুরে আসেন বলে জানা গেছে। এরপর থেকেই সিঙ্গাপুরে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনেদিনে বাড়তে থাকে।

করোনাভাইরাস যেন সিঙ্গাপুরে মহামারি আকার ধারণ করতে না পারে সেজন্য দেশটির সরকার নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে তিনটি রিস্ক লেভেল ঘোষণা করে দেশটির সরকার।প্রথম ‘ইয়োলা’ মানে আক্রান্ত রোগীরা চীনা নাগরিক কিংবা সর্বশেষ দেশটি ভ্রমণ করে এসেছে।

দ্বিতীয় রিস্ক লেভেল ‘অরেঞ্জ’ মানে কিছু কিছু স্থানীয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যাদের কেউ চীন ভ্রমণ করেনি কিংবা এ ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।

সর্বশেষ রিস্ক লেভেল ‘রেড’ অর্থাৎ সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেই রিস্ক লেভেল ‘লাল’ ঘোষণা করা হবে। তখন সমস্ত অফিস, স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হবে।৭ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে চারজন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হন। যারা চীনে ভ্রমণ করেননি এমনকি পূর্বের রোগীদের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। সেদিন রিস্ক লেভেল অরেঞ্জ ঘোষণা করা হয়।

এ ছাড়া অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার-

১) চীনফেরত ব্যক্তিদের ১৪ দিনের লিভ অফ এবসেন্স পাঠাতে হবে। এই ১৪ দিন তারা বাসায় থাকবে এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি এ সময়ের মধ্যে শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা না যায় তবেই কাজে যেতে পারবে। কিন্তু কয়েকজন চীনফেরত শ্রমিক লিফ অব এবসেন্স অগ্রাহ্য করে কাজের গিয়েছিল সঙ্গে সঙ্গে তাদের চীনে ফেরত পাঠানো হয়।

২) প্রতিটি বাস, ট্রেন, ট্যাক্সি এমনকি শপিং মলের সিঁড়ি, লিফট ক্যামিকেল স্প্রে করে ভাইরাসমুক্ত করা হচ্ছে।৩) স্থানীয় ও অভিবাসী প্রত্যেকের দৈনিক ২ বার শরীরের তাপমাত্রা চেক করা হচ্ছে।

৪) সর্দি, কাশি, জ্বর অর্থাৎ ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নিশ্চিত হলে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।৫) কোনো পরিবারে বা কারো শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেলে সে পরিবারের সবাইকে আলাদাভাবে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণ করা হয়। যাতে করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারে।

৬) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সরকারি খরচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সিঙ্গাপুর সরকারের গৃহীত এমন পদক্ষেপে প্রবাসীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। যদিও প্রথমদিকে ৫ জন বাংলাদেশির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

সিঙ্গাপুর প্রবাসী জুলকার নাইম বলেন, করোনাভাইরাসের কথা শুনে প্রথমে আমরা খুব ভয়ে ছিলাম। বাংলাদেশে আমাদের পরিবারও আতঙ্কিত হয়ে গেছিল। কিন্তু সিঙ্গাপুর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ দেখে সব শঙ্কা দূর হয়ে যায়। দেশটির এমন পদক্ষেপ ও আল্লাহ পাকের রহমতে আমরা এখন খুব ভালো আছি। এখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছি।

প্রবাসী আকরান খান বলেন, অন্য সবার মতো আমিও আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সিঙ্গাপুর সরকারের তৎপরতা দেখে ভয় কেটে গেছে।

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৭২ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে। ৫ জন বাংলাদেশির মধ্যে দুইজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এখন পর্যন্ত কারো মৃত্যু হয়নি।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর এটি চীনের বেশ কিছু শহরে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।

শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯ হাজার ৮২৪ জন। অপরদিকে, মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৮৭০ জনের। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ১৫০ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের।

অপরদিকে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এই ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা ইতালিতে। সেখানে ১ হাজার ১২৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। এদিকে, করোনভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকদের জনসমাগম ও ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, মধ্যপ্রাচ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *