করোনায় ইউরোপ মৃ’ত্যু লাখ ছাড়াল, বিশ্বে প্রা’ণ গেছে ১ লাখ ৬২ হাজার !!
করোনাভা’ইরাসে বিশ্বব্যাপী প্রা’ণহানির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই হয়েছে ইউরোপে। এ মহাদেশে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সামাজিক দূরত্ব ও ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের বড় বড় শহরগুলোর রাজপথ ফাঁকা। ঘরবন্দি হয়ে দিন কাটছে মানুষের। তাতেও কমেনি করোনার তাণ্ডব।
সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রা’ণঘা’তী এ ভা’ইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে। ইতোমধ্যে এসব দেশে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার। একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সীমান্তে ভ্রমণে কড়াকড়ির মেয়াদ আরও ৩০ দিন বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা।রাশিয়া ও সিঙ্গাপুরে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভারতে করোনায় মৃত্যু ৫শ’ ছাড়িয়ে গেছে। মহাকাশেও দেখা দিয়েছে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী- বিশ্বে করোনাভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত হয়েছেন ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৮৯। মারা গেছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৮ জন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৪১ জন। শুধু ইউরোপ অঞ্চলেই মারা গেছেন ১ লাখ ৫১০ জন। এ মহাদেশের ইতালি ও স্পেনেই ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ প্রা’ণ হারিয়েছেন। ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ২৩ হাজার ২২৭ জন, স্পেনে ২০ হাজার ৪৫৩ জন। দেশ দুটিতে আ’ক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে- ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৫ এবং ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৪৪ জন। এরপর রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে ১৯ হাজার ৩২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভা’ইরাসে, আ’ক্রান্ত ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৯৩ জন। যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা ১৬ হাজার ৬০ জন। সেখানে আ’ক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৬৭ জন। জার্মানিতে মৃত্যু ৪ হাজার ৫৪৭, আ’ক্রান্ত ১ লাখ ৪৪ হাজর ৩৪৮ জন।
যুক্তরাজ্যের কেয়ার হোম চ্যারিটি বলছে, ব্রিটেনে করোনায় যে মৃতের সংখ্যা বলা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে এর চেয়ে আরও সাড়ে ৭ হাজার মানুষ বেশি মারা গেছেন। চ্যারিটির চিফ এক্সিকিউটিভ মার্টিন গ্রিন দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফকে বলেন, আমরা আগের বছরগুলোর মৃত্যুহারের সঙ্গে তুলনা করে দেখেছি, এবার ওই সংখ্যক মানুষ বেশি মারা গেছেন। হয়তো তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, এ সংকটকালীন পরিস্থিতেও গোটা মহাদেশের মধ্যে একাধিক দেশে রাজনৈতিক বিভাজন করোনা মোকাবেলাকে দুর্বল করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ মাসের শুরুর দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা ৫০০ বিলিয়ন ইউরো বেলআউট প্যাকেজ ঘোষণার ব্যাপারে সম্মত হন। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেলআউট তহবিলের (ইউরোপিয়ান স্ট্যাবিলিটি মেকানিজম) প্রধান ক্লাউস রেজলিং জানিয়েছেন, করোনা মহামারীর প্রভাব ঠেকাতে আরও ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর তহবিল প্রয়োজন হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে আরও ১৮৪৯ মৃত্যু : করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আ’ক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে একদিনে আরও ৩৩ হাজার ৪শ’ জন আ’ক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১ হাজার ৮৪৯ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভা’ইরাসে আ’ক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৪০ হাজার ১৫১, মারা গেছেন ৩৯ হাজার ৬৮ জন। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভা’ইরাস। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। শুধু নিউইয়র্কেই করোনায় আ’ক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৬৭১ জন মারা গেছেন। শনিবার করোনায় মৃত্যু ও আ’ক্রান্তের হিসাব দিতে গিয়ে নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ডরু কুমো জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় অঙ্গরাজ্যে ৫৪০ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন, যা গত দিনগুলোর তুলনায় কিছুটা কম। এদিকে নিজেদের সীমান্তে কড়াকড়ি আরও বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। করোনাভা’ইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আরও ৩০ দিনের জন্য দুই দেশের সীমান্তে কড়াকড়ি অবস্থা জারি থাকবে।
রাশিয়ায় একদিনে আ’ক্রান্তের রেকর্ড : রাশিয়ায় কোভিড-১৯-এ আ’ক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬ হাজার ৬০ জন আ’ক্রান্ত হয়েছেন; যা রাশিয়ায় একদিনে সর্বোচ্চ আ’ক্রান্তের রেকর্ড। দেশটির করোনাভা’ইরাস রেসপন্স সেন্টার রোববার এ হিসাব দিয়ে বলছে, প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর দেশজুড়ে ইতোমধ্যে ৪২ হাজার ৮৫৩ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৬১ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪৮ জন। এছাড়া ৩ হাজার ৩০০ জন রোগী চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন।
সিঙ্গাপুরে একদিনে সর্বোচ্চ আ’ক্রান্ত : সিঙ্গাপুরে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ করোনাভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে নতুন করে সংক্রমিত হন ৯৪২ জন। সব মিলিয়ে সেখানে আ’ক্রান্তের সংখ্যা ৫৯৯২। এর মধ্যে মারা গেছেন ১১ জন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির বিভিন্ন ডরমেটরিতে বিদেশি শ্রমিকরা ঠাসাঠাসি করে বসবাস করেন। এসব ডরমেটরিতে বিস্ফোরণের মতো সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি হসেইন লুং শনিবার বলেছেন, ডরমেটরিগুলোতে সংক্রমণের চেইন ভেঙে দিতে কিছুটা সময় লাগবে। ফেসবুকে দেয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যারা করোনাভা’ইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অবস্থা গুরুতর নয়। তারা বয়সে তরুণ। প্রধানমন্ত্রী লি জানান, আজ থেকে ৪ মে পর্যন্ত সেখানে আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারতে মৃত্যু ৫শ’ ছাড়াল : ভারতে করোনাভা’ইরাসে আ’ক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। প্রা’ণঘাতী এ ভা’ইরাসে দেশটিতে মারা গেছেন ৫৩৮ জন। আ’ক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৪০২। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১৩ জন আ’ক্রান্ত হয়েছেন এবং ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিল্লিতে এক পরিবারে ৩১ জন করোনায় আ’ক্রান্ত হয়েছেন। তবে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনায় সুস্থ হয়ে উঠার পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যাচ্ছে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। রোববার সকাল পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠার পরিমাণ ১৪.২ শতাংশ। শনিবার যা ছিল ১৩.৮৫ শতাংশ। গত মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার যা ছিল যথাক্রমে- ৯.৯৯, ১১.৪১, ১২.০২ ও ১৩.০৬ শতাংশ। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষণা অনুযায়ী, আজকের (২০ এপ্রিল) পর সংক্রমণ দেখা যায় না- এমন স্থানে লকডাউন শিথিল হতে পারে।