Jana Ojana

করোনায় মৃ’তদের শেষ বিদায় যেন বেদনাবিধুর না হয় !!

মানুষ যখন মারা যায় তখন তার এক অসহায় অবস্থা হয়। এত দিন যে লোকটা বাজার ঘাট মসজিদ বা তীর্থকেন্দ্র প্রভৃতি স্থানে হেঁটে চলে বেড়িয়েছে এখন একেবারে অসহায়ের মত নিথর হয়ে পড়ে থাকে।চরম শত্রুর চোখেও এসময় তার অসহায়ত্ব দেখে অশ্রু চলে আসা স্বাভাবিক। কঠিন প্রাণ কেউ হয়ত তার অসহায়ত্ব দেখে হেসে থাকতে পারে। কিন্তু মৃ’তের লা’শ দেখে যে হাসছে তাকেও একদিন মরতে হবে। এমন মন্দতর লোকটার জন্যও তার প্রতিবেশীদের মনে মায়ার উদ্রেক হবে। যে মরে গেছে সে তো আল্লাহর কাছেই চলে গেছে। তার সঙ্গে তার মালিক বুঝবেন কী ধরনের আচরণ করবেন। কিন্তু মৃ’ত ব্যক্তির স্বজনদের দুঃখ কষ্টের শেষ থাকে না।

অতীতের নানান স্মৃতি তাদের বেদনাবিধুর করে রাখে। মানুষ যত মন্দই হোক তার স্মৃতিগুলো কাছের মানুষদের কাঁদায়। সমাজ ও চেনা লোকদের এজন্য এসময় কর্তব্য হয় মৃ’তের সৎকার ও অন্যান্য বিষয়ে পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়ানো।দাফন কাফনে সহায়তা করা যেমন সওয়াবের কাজ; পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নেয়া এবং তাদের সান্তনা দেয়াও ইসলামে অনেক সওয়াবের।

প্রতিটি মুসলিমের জানাজার নামাজ আদায় করাতেই রয়েছে অশেষ নেকি। হাদিসের ভাষায় জানাজা পড়লে এক কিরাত সওয়াব পাওয়া যায়। এক কিরাতের পরিমাণ রাসূল সা. নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন, ওহুদ পাহাড় সমান।সুবহানাল্লাহ। একটি জানাজা পড়লে উহুদ পাহাড় সমান সওয়াব পাওয়া যায়। আর জানাজা শেষে লা’শের পিছে পিছে গোরস্থান পর্যন্ত গেলে দুই কেরাত অর্থাৎ দুটি উহুদ পাহাড় সমান নেকি ব্যক্তির আমলনামায় লেখা হয়।

এই যে সওয়াব তা যে কোনো লোকের জানাজার নামাযের ক্ষেত্রেই। বড় আলেমের জানাজার নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব আর সাধারণ মুসলমানের জানাজায় কম সওয়াব এমন কথা কোনো হাদিসে নেই।আমাদের সমাজে দেখা যায় বড় কোনো প্রসিদ্ধ মানুষ মারা গেলে তার জানাজার জন্য অসম্ভব ভিড় হয়। সাধারণ মানুষ হলে তার জানাজায় তেমন কোনো লোকই থাকে না। তার জন্য কাঁদার কেউ থাকে না।

অথচ যার পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই তার স্বজনদের কাছে গিয়ে সান্তনা দেয়ায় যে সওয়াব রয়েছে তার কোনো তুলনা নাই। যার শোক করার লোকের অভাব নাই সেখানে ভিড় না বাড়িয়ে সমাজের হতদরিদ্র ও সাধারণ একটা মানুষ যখন মারা যায় তার বাড়ির খোঁজ খবর নেওয়া উচিত।

সেদিন তাদের বাড়ির চুলা জ্বলে না। কেউ তাদের জন্য খাবার রান্না করে আনার মতও থাকে না। এসময় মানবিক হয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত যে কোনো খাঁটি মুসলিমের। আমাদের সমাজ থেকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা যেন দিন দিন উঠে যাচ্ছে। ইসলামের প্রতিটি শিক্ষাই মানবিক। মানুষের জন্য কল্যাণকর।

সারা বিশ্ব করোনাভা’ইরাসে নাকাল। অসংখ্য মানুষ এতে আ’ক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। সব ধর্ম বর্ণের মানুষই মরছে।ইতিমধ্যেই আমাদের দেশে শতাধিক মানুষ মৃ’ত্যুমুখে হয়েছে নিপতিত। এসময় একদল লেবাসধারি হুজুর বলে বেড়াচ্ছেন মুসলমানের কখনও করোনা হতে পারে না। এসব কথা আ’ক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কতটা কষ্টের তা বোঝা কঠিন কিছু নয়। অথচ প্রিয় নবীর বহু সাহাবির মৃত্যু হয়েছে মহামারিতে।

এসমস্ত গুজবের কারণেও হয়ত করোনায় মৃ’ত’দের জানাযায় মানুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সংক্রমণের ভয়েও অনেকে দাফন কাফন করছে না। লা’শগুলোর চরম অসম্মান করা হচ্ছে। বিভিন্ন গোরস্থানে কবরস্থ করতে দেয়া হয়নি। অথচ মৃ’তের শরীরে ভা’ইরাস বেঁচে থাকে না। বিশেষজ্ঞরা এমনই বলছেন।

বুখারী শরীফের হাদিসে বলা হয়েছে, মহামারিতে মৃ’ত ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা পাবে। হাফেজ ইবন হাজার আসকালানির মতে পাপিষ্ঠ ব্যক্তিও যদি মহামারিতে মারা যায় সেও এ হাদীসের ভাষ্য অনুসারে শহীদ হবে। [বাযলুল মাউন]

নবি ও সিদ্দিকদের পর সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হচ্ছে শহীদ। শহীদের মৃ’ত্যুর জন্য প্রতিটি দ্বীনদার মুমিনেরই আ’কাঙ্খা থাকে। এখন যখন আমাদের সমাজে করোনার ফলে কিছু মুসলিম ভাইকে এ মর্যাদায় অভিষিক্ত হতে দেখছি আমাদের উচিত তাদের পূর্ণ সম্মানের সাথে দাফন কাফন সম্পন্ন করা।

অবশ্যই নিজেদের সুরক্ষার সব ব্যবস্থা রেখেই গোসল ও দাফন করতে হবে। সুন্দর ভাবে তাদের জানাজাও হওয়া চাই।আম্মাজান মাইমুনা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, কোনো মৃ’ত ব্যক্তির লা’শ সামনে রেখে যদি একটি বড় দল জানাজা আদায় করে তাহলে তার ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবুল করা হয়। বড় দল ক জনে হবে বলে একজন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ৪০ জন। [নাসাই]

মালেক ইবন হুবাইরা রা.-এর বর্ণনায় এসেছে রাসূল সা. বলেন, কোনো ব্যক্তির জানাজায় যদি তিন কাতার লোক নামাজ পড়ে তাহলে সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। [তিরমিযি, আবু দাউদ, ইবন মাজাহ]মালেক ইবন হুবাইরা যখনই কোনো জানাজার নামাজ পড়াতেন যদি লোক সংখ্যা কম থাকত তাহলেও তিনি উপস্থিত মুসল্লিদেরকে তিন কাতার করে দাঁড় করাতেন।

একেক কাতারে যদি তিন জন হয় তাহলে তিন কাতারে নয় জন। ইমামসহ মোট দশজন হলেই এ হাদিসের উপর আমল করা যায়। করোনা এ সময়ে জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা রয়েছে। তাই এ হাদিসের উপর আমল করা যেতে পারে। দশজন অংশগ্রহণ করতে পারে একেকটি জানাযায়।দেশের আলেম সমাজের কাছে মানুষ আর কি চায়? মরার পর যেন জানাজাটা ঠিকঠাক হতে পারে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আলেম সমাজ ভূমিকা রাখা উচিত। এই করোনার দুঃসময়ে অনেক স্থানে দেখা যাচ্ছে অনেক তরুণ আলেমই এই সেবা করে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও একজন আলেমকেও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন ঘটনা বেশ কিছু স্থানেই হয়েছে।

গণমাধ্যমে ঝিনাইদহের একটি খবর দেখলাম। করোনায় মৃ’ত ব্যক্তিটির জানাজা পড়ানোর জন্য কাউকে না পাওয়ায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই ইমামতি করেছেন। সত্যি আইন শৃংখলা বাহিনির অনেক দুর্নাম আমাদের দেশে আছে। কিন্তু এবারের দুর্যোগে তারা দেশের মানুষের যে সেবা করেছে তা ভোলার মত নয়।

কেবল আইন শৃংখলা বাহিনী নয়, যারাই এ দুর্যোগে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন দুনিয়া আখেরাতে তারা এর প্রতিদান পাবেন। আল্লাহ মানুষের কোনো ঋণ রাখেন না। বহু গুণে ফিরিয়ে দেন।শেষ করার আগে আবারও বলব, শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে আইন ভঙ্গ করে অসংখ্য মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে কোনো বড় বুযুর্গ বা আলেমের জানাজায় না গিয়ে করোনায় আ’ক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সাধারণ মুসলিমের জানাজাটা সাহস করে আদায় করুন। আরও বেশি সওয়াব পাবেন ইনশাল্লাহ।

সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টের ভাগ নেয়ার চেষ্টা করুন। রাসূল সা. ইরশাদ করেন, বিপদাক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে যদি কেউ সান্ত্বনা দেয় তাহলে তার জন্য রয়েছে প্রভূত প্রতিদান।অন্য বর্ণনায় রয়েছে, স্বজনহারা ব্যক্তিকে যে সান্ত্বনা দিবে তাকে জান্নাতের পোষাক পরিধান করানো হবে। [তিরমিযি]

অপর বর্ণনায় নবীজী সা. ইরশাদ করেন, কেউ যদি তার মুসলিম ভাইয়ের শোকসন্তপ্ত অন্তর শীতল করার চেষ্টা করে আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন সম্মানের পোষাক পরিধান করাবেন। [ইবন মাজাহ]আল্লাহ আমাদের সবাইকে করোনাভা’ইরাস থেকে হেফাজত করুন এবং এই দুর্যোগকালে আরেকটু মানবিক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button