করোনায় মৃ’ত্যু ছাড়ালো লাখ, আ’ক্রান্ত প্রায় ১৭ লাখ !!

বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতির ময়দানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে চীনের আবির্ভাব ভালো চোখে দেখা হচ্ছিল না তেমন একটা। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে দেওয়া চীনা ঋণ বা সহায়তা নিয়েও সরব ছিল উন্নত বিশ্ব। ফেলে আসা বছরটি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের দামামা বেজেই যাচ্ছিল, দেখা যাচ্ছিল না থামার কোনো লক্ষণ। একটা চুক্তি তাদের মধ্যে হলেও তা আসলেই বাস্তবে কতটা প্রয়োগ হবে তা নিয়ে ছিল নানা প্রশ্ন।

এর মধ্যেই ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে চীন জানালো, দেশটির হুবেই প্রদেশের উহানের একটি পাইকারি সি ফুড মার্কেট এলাকায় এক ধরনের নিউমোনিয়ায় আ’ক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। একে কর্তৃপক্ষ এক ধরনের করোনা ভা’ইরাস হিসেবে শনাক্ত করলো। দেশটিতে হু হু করে বাড়তে থাকলো আ’ক্রান্তের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল মৃ’ত্যুও। দ্রুত কর্তৃপক্ষ রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য উহান লকডাউন করলো। এরপর ধীরে ধীরে লকডাউন করা হলো দেশটির বহু শহর।

কিন্তু কাজের কাজ আর হলো কোথায়? রোগটি চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে ছড়িয়ে যায় ফিলিপিন্স ও হংকংয়ে। প্রকোপ বাড়তে থাকার মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দিল কভিড-১৯। একইসঙ্গে একে ঘোষণা করা হলো, বৈশ্বিক ম’হামা’রি হিসেবেও।

ধীরে ধীরে কভিড-১৯ চীনে তাণ্ডব চালিয়ে হলো ইউরোপমুখী। তখন ম’হামা’রির কেন্দ্রে পরিণত হলো ইউরোপ। ইতালিকে বানালো মৃ’ত্যুপুরী। এরপর ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়ামসহ মহাদেশটির প্রায় সবদেশেই প্রাণহানি বেড়েই চলেছে। এশিয়ার দেশ ইরানও বেশ বেকায়দায় রোগটি নিয়ে।

ইউরোপ যখন এই রোগ সামলাতে নাস্তানাবুদ চীন তখন অনেকটা সামলে নিয়েছে। সেখানে শুরুর দিকে যেভাবে আ’ক্রান্ত এবং মৃ’ত্যুর ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছিল তাতে বেশ শক্ত হাতে লাগাম টেনে ধরেছে দেশটি। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহসহ অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতাও করা শুরু করেছে।

এ রোগের কোনো ওষুধ আবিষ্কার না হলেও রোগটি নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতির কথা বার বার জানিয়ে আসছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপে প্রতিদিন যখন হাজার হাজার প্রাণ কাড়ছিল যুক্তরাষ্ট্রে তখনও ততটা ভংয়কর হয়ে ওঠেনি কভিড-১৯। কিন্তু আজ কভিড-১৯ এর দংশনে নীল যুক্তরাষ্ট্র।

চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি চীন জানালো করোনা ভা’ইরাসে দেশটিতে প্রাণ গেছে ৮ জনের। এরপর পার হতে চলেছে ৮১ দিন। এরমধ্যে বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ প্রাণ কেড়েছে ১ লাখ ৪৩৭ জনের। শুরুর দিকে চীনে মৃ’ত্যুর হার ছিল বেশি। কিন্তু তাকে খুব কম সময়ের মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইরান। সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে ইতালিতে। দেশটিতে মোট মৃ’ত্যুর সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪৯, যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ হাজার ৯১১, স্পেনে ১৫ হাজার ৯৭০, ফ্রান্সে ১২ হাজার ২১০, যুক্তরাজ্যে ৮ হাজার ৯৩১, ইরানে ৪ হাজার ২৩২, চীনে ৩ হাজার ৩৩৬, বেলজিয়ামে ৩ হাজার ১৯, জার্মানিতে ২ হাজার ৬০৭, নেদারল্যান্ডসে ২ হাজার ৫১১ জনের প্রাণ গেছে। এছাড়া বিশ্বের প্রায় ১৮৫ দেশ ও অঞ্চলে পাওয়া গেছে করোনা ভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত রোগী।

এ রোগে বিশ্বজুড়ে আ’ক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৭ লাখের কাছাকাছি। সবচেয়ে বেশি আ’ক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে মোট আ’ক্রান্ত প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজারের মতো। স্পেন, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সে লাখ পেরিয়েছে আ’ক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চীনে নতুন আ’ক্রান্তের সংখ্যা একেবারে কমে এলেও দেশটিতে মোট আ’ক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার মানুষ।তবে রয়েছে সুখবরও। বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজারেরও বেশি। সবচেয়ে বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন চীনে, যার সংখ্যা প্রায় ৭৮ হাজার।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *