করোনা-ভাইরাস শনাক্ত করতে রোবট তৈরি করল বাংলাদেশ !!

মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল নামে একটি মেডিকেল রোবট তৈরি করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যয়নরত পাঁচ শিক্ষার্থী। এই রোবট চলাফেরাসহ সালাম দিয়ে নিজের নাম, দেশের নাম, জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলতে পারে। পাঁচ শিক্ষার্থীর দাবি, মানুষের শরীরের তাপমাত্রা, হৃদয়ের কম্পন, অক্সিজেনের পরিমাণ ও রক্তচাপ পরিমাপসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নীরিক্ষাও করতে সক্ষম এটি। দেশে এটিই প্রথম মেডিকেল রোবট।

পাঁচ শিক্ষার্থীই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুরে অবস্থিত ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত। এদের চারজন মো. আশিকুর রহমান, মো. আনাসুর রহমান, মো. মীর আমিন ও মেহেদী হাসান ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বাকি একজন আব্দুল মোন্নাফ ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী। ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের ল্যাবে এই রোবট বানানো হয়। এতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। যার সিংহভাগ শিক্ষার্থীরাই যোগাড় করেছেন। তবে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অল্প কিছু আর্থিক সহযোগিতাও পেয়েছেন তাঁরা।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, মি. ইলেক্ট্রোমেডিকেল রোবট মানুষের শরীরের রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ, ইসিজি, হৃদয়ের কম্পন, (হার্টবিট), কোলেস্টরল, ইউরিক এসিড ও ব্লাড সুগার পরিমাপসহ রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে সক্ষম। এজন্য রোবটটিতে বি পি মনিটর, ইসিজি সেন্সর, পাল্স অক্সিমেটরি সেন্সর, জি সি ইউ সেন্সর, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও থার্মাল স্ক্যানার যুক্ত করা হয়েছে। আর চলাফেলা করার জন্য এরমধ্যে ক্যামেরা ও আল্ট্রাসনিক সেন্সর লাগানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এসব ফিচার ব্যবহারও করা হয়েছে।

ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রোমেডিকেল বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এই রোবট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপদ নয়। কিন্তু এই রোবট আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে গিয়ে তার শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, ইজিসি, হার্টবিট ও অক্সিজেনের পরিমাণ পরিমাপ করতে পারবে। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে ওষুধ ও খাবার সরবরাহের কাজও করতে পারবে এই রোবট।

জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি এই রোবট বানানোর কাজ শুরু করেন এই পাঁচ শিক্ষার্থী। টানা ১৫ দিন কাজ করে তারা এই রোবট বানান। গত ২৩ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের কাছে রোবটটি হস্তান্তর করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, পালস্ অক্সিমেটরি সেন্সরে আঙ্গুল রাখলেই হৃদয়ের কম্পন হার্টবিট ও অক্সিজেনের পরিমাণ দেখা যাবে। রোবটের হাতে থাকা রক্তচাপ পরিমাপ যন্ত্র দিয়ে সহজেই উচ্চ রক্তচাপ ও নিম্ন রক্তচাপ জানা যাবে। এছাড়া জি.সি.ইউ সেন্সরের মাধ্যমে কোলেস্টরল, ইউরিক এসিড, ব্লাড সুগার ও ব্লাড গ্রুপ জানা যাবে। তারা আরো জানান, মাদকাসক্ত শনাক্ত করতে এবং আগুন লাগার খবর দিতে রোবটটিতে অ্যালকোহল ডিটেক্টর ও ফায়ার অ্যালার্ম যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি যে কোনো জায়গা থেকে মুঠোফোনে রোবটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপস্ তৈরির কাজও করছেন ওই পাঁচ শিক্ষার্থী।

এই কাজের প্রধান উদ্যোক্ত হলেন শিক্ষার্থী আশিকুর বলেন, ‘মেডিক্যাল রোবট দেশে আগে কখনও তৈরি হয়নি। আমরাই প্রথম এটি বানিয়েছি। একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল পরীক্ষা-নীরিক্ষার কাজ এই রোবট দিয়ে করা সম্ভব। রোবটিকে আরো আধুনিক ও উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে যেন চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতেও এটি কাজ করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘মেডিকেলে এটি কাজে আসলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল দেশের সেরা মেডিকেল রোবট হবে।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রোমেডিকেল বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর মো. আবুল কাশেম জানান, রোবটটি বিভিন্ন বায়োমেডিকেল কাজ করতে পারে। রোগীর শারীরিক অবস্থা জানাসহ রোগীর কাছে ওষুধ ও খাবার সরবরাহের কাজটি খুব সহজভাবে করতে পারবে এই রোবট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ছাত্র-শিক্ষকরা তাদের স্বল্প সামর্থ্যের মধ্যে এই রোবট তৈরি করেছে। কেউ অর্থায়ন করলে রোবটটিকে আরো কার্যকর করা সম্ভব।’

সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *