করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মেনে চলুন এই ৭ পরামর্শ !!

২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া প্রাণ সংহারি করোনা ভা’ইরাসে (কোভিড-১৯) আ’ক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দুই লাখ তিন হাজার ৫৯৬ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া শনাক্ত হয়েছেন ২৯ লাখ ৩১ হাজার ৯২৩ জন। আর আ’ক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৯৫ জন মানুষ। বিশ্বব্যাপী করোনা ভা’ইরাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার আজ (রোববার) এসব তথ্য প্রকাশ করে। তথ্য অনুযায়ী, করোনা ভা’ইরাসে আ’ক্রান্তদের মধ্যে বর্তমানে ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯৭ জন চিকিৎসাধীন এবং ৫৭ হাজার ৮৩৫ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী- এখন পর্যন্ত ভা’ইরাসটির আ’ক্রমণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রয়েছে আমেরিকা। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ হাজার ৪১৮ ব্যক্তি করোনায় আ’ক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে ৯ লাখ ৬০ হাজার ৬৫১ জনের শরীরে ভা’ইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। এ সময় মারা গেছেন ৫৪ হাজার ২৫৬ জন মানুষ। মানুষ থেকে মানুষের দেহে এই ভা’ইরাস কীভাবে ছড়ায় সে বিষয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। তবে সাধারণ কিছু সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এসব সতর্কতা অবলম্বন করলে করোনা ভা’ইরাসে সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

এ সতর্কতাগুলো কী? সেগুলো তুলে ধরা হলো।

১. গণপরিবহন: গণপরিবহন এড়িয়ে চলা কিংবা সতর্কতার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাস, ট্রেন কিংবা অন্য যে কোন ধরণের পরিবহনের হাতল কিংবা আসনে করোনাভা’ইরাস থাকতে পারে। সেজন্য যে কোনো পরিবহনে চলাফেরার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা এবং সেখান থেকে নেমে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

২. কর্মক্ষেত্র: অফিসে একই ডেস্ক এবং কম্পিউটার ব্যবহার করলেও ভা’ইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁচি-কাশি থেকে করোনা ভা’ইরাস ছড়ায়। যে কোনো জায়গায় করোনা ভা’ইরাস কয়েক ঘণ্টা এমনকি কয়েকদিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। অফিসের ডেস্কে বসার আগে কম্পিউটার, কিবোর্ড এবং মাউস পরিষ্কার করে নিন।

৩. জনসমাগমস্থল: যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় সেসব স্থান এড়িয়ে চলা কিংবা বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে খেলাধুলার স্থান, সিনেমা হল থেকে শুরু করে ধর্মীয় স্থানও রয়েছে। বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে জুমার নামাজের সময় বাড়ি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সৌদি আরব ইতোমধ্যেই ওমরাহ বন্ধ করেছে।

৪. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যখন গ্রাহকরা যায় তখন অনেকেই একটি কলম ব্যবহার করেন। করোনা ভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি সে কলম ব্যবহার করে তাহলে পরবর্তী ব্যবহারকারীদেরও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সেজন্য নিজের কলম আলাদা করে রাখতে পারেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। এছাড়া টাকা উত্তোলনের জন্য যে এটিএম বুথ ব্যবহার করা হয়, সেখান থেকেও সংক্রমণ হতে পারে। কারণ এটিএম বুথের বাটন অনেকে ব্যবহার করে।

৫. লিফট: ভা’ইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে আরেকটি জায়গা হতে পারে বাড়ি কিংবা অফিসের লিফট।
লিফট ব্যবহারের সময় নির্ধারিত ফ্লোরে যাবার জন্য লিফটের বাটন অনেকে ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন অফিস ভবনে প্রতিদিন শত-শত মানুষ লিফট ব্যবহার করছেন। এদের মধ্যে কেউ যদি করোনা ভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত রোগী থাকেন এবং সে লিফটের বাটনে অন্যদের আঙ্গুল গেলেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।

৬. টাকা-পয়সা: ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরণের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করার ঘটনা নতুন নয়। এমনকি ব্যাংক নোটের মাধ্যমে সংক্রামক নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথাও বলেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের একদল গবেষক গত বছরের অগাস্ট মাসে বলেছিলেন, তারা বাংলাদেশি কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রায় এমন ধরণের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন, যা সাধারণত মল-মূত্রের মধ্যে থাকে। গতমাসে ভা’ইরাসের উপস্থিতি নিয়ে টাকা বা ব্যাংক নোট জীবাণুমুক্ত করার একটি উদ্যোগ দেখা যায় চীনে। দেশটিতে সম্প্রতি করোনা ভা’ইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সেখানে ভা’ইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে বাজার থেকে ব্যাংক নোট সরিয়ে নিয়ে তা আবার জীবাণুমুক্ত করে বাজারে ছাড়ে দেশটি।

৭. শুভেচ্ছা বিনিময়: করমর্দন এবং কোলাকুলির মাধ্যমেও করোনাভা’ইরাস ছড়াতে পারে।আপনি যে ব্যক্তির সাথে কোলাকুলি এবং করমর্দন করছেন, তিনি যদি করোনা ভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত হন তাহলে সেটি অন্যের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। এজন্য করমর্দন এবং কোলাকুলির না করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন- সবকিছুর মূল কথা হচ্ছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা। হাত না ধুয়ে নিজের মুখমণ্ডল স্পর্শ করবেন না। এটি হলে ভা’ইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য নিয়মিত ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র- বিবিসি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *