Jana Ojana

করোনা সন্দেহে মৃ’তের কাছে যাননি স্ত্রী-সন্তান – দাফন করলেন ইউএনও !!

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় করোনা ভা’ইরাসে মৃ’ত সন্দেহে ঢাকা ফেরত এক ব্যক্তির দাফন না করে দীর্ঘক্ষণ ঘরে ফেলে রাখেন তার স্ত্রী, সন্তান ও ভাইয়েরা।পরে বিষয়টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইউএনওকে জানালে গভীর রাতে মরদেহ গোসল থেকে শুরু করে জানাজা ও দাফনসহ সব কিছুর ব্যবস্থা করেন ভান্ডারিয়ার ইউএনও নাজমুল আলম নবিন।

এসময় তাকে উপজেলার অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও সহায়তা করেন।মরদেহ দাফন শেষে বিষয়টি নিয়ে ইউএনও নাজমুল আলম নবিন একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে সবাইকে আরও বেশি মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান।

স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

এতো অস্বস্তি ঘুম আর খুব কম সময়েই হয়েছে। রাত দুইটায় বাসায় ফিরেছি এখন ৬টা বাজে শুধু এপাশ ওপাশই করলাম। কেন? আমার তো এরকম হয় না। ঘুমে তো কম্প্রোমাইজ নেই। আবেগের তো জায়গা নেই।

এক মৃত ব্যক্তির গোসল, জানাজা, দাফন সম্পন্ন করে আসলাম আমরা। রাত ৮টার দিকে ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু সাহেবের ফোন পেলাম। একটি ভিডিও কনফারেন্স থাকায় একটু পরে তাকে কলব্যাক করলে তিনি জানান, তিন চার দিন আগে রাজপাশা গ্রামে এক ভদ্রলোক এসেছেন ঢাকা থেকে তার নিজ বাড়িতে। অসুস্থ ছিলেন, আজ সন্ধ্যায় তিনি মারা গেছেন। এলাকার লোকের সন্দেহ তিনি কোভিডে আ’ক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। লাশ গোসল করানো, দাফন করানোর জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। আপন ভাইদেরও ফোন বন্ধ।

চেয়ারম্যান সাহেবকে বললাম, চিন্তা করেন না আমরা সবাই মিলে দাফন করবো। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জহিরুল ভাইকে ফোনে বললাম, ভাই সাথে সাথে মেডিকেল টিম রেডি করলো স্যাম্পল নেয়ার জন্য। দাফনের জন্যও একটি টিম রেডি। পুলিশ সদস্যরাও যান আমাদের সাথে। চেয়ারম্যান মহোদয় কয়েকজন গোরখোদকের ব্যবস্থা করলেন, যারা রাজপাশার মৃত ব্যক্তিটির শেষ ঘরটি তৈরি করলেন।

আমাদের উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদ অসম্ভব ধার্মিক এবং একজন ক্কারী। তৌহিদকে বললাম যদি প্রয়োজন হয় তোমার একজনের জানাজা পড়াতে হবে। সেও প্রস্তুত হলো। যদিও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে করা একটি কমিটির দুইজন হুজুর আমাদের সাথে যান। যারা গোসল করানোর নিয়মটা বলে দেয়ার জন্যেও লাশের কাছে যাননি। তৌহিদের ইন্সট্রাকশনে মানবিক গোরখোদক মনিরের সহায়তায় লাশের গোসল সম্পন্ন হয়।

আমরা সবাইকে প্রস্তুত করে রাজপাশায় পৌঁছাই রাত ১১.৩০ মিনিটে। তখন পর্যন্ত লাশের গোসল হয়নি। কেউ কাছেও আসেনি। লাশটি ঘরের বাইরে আনার মতোও কেউ ছিলো না। হতভাগ্যের ঘরে তখন তার স্ত্রী, এক কন্যা, আরেক পুত্র ছিলো। অন্য আরেক ছেলে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে। সে বাড়িতে পৌঁছলেই মৃত-ব্যক্তির স্ত্রী এবং সন্তানেরা আমাদের জানান তার কোভিডের কোন লক্ষণ ছিলো না। কিন্তু লাশটি গোসলের জন্য বাইরে নিয়ে আসার জন্য হাতটি পর্যন্ত দিলো না। লাশ বাইরে আনলো ওই মেডিকেল টিমের তুহিন, আসাসসহ কয়েকজন, যাদের আমরা পিপিই পরিয়ে দেই।

গোসলের সময় আড়াল দেয়ার জন্য একটি বিছানার চাদর থেকে শুরু করে মাটিতে নামানোর জন্য একটি গামছা পর্যন্ত ব্যবস্থা করতে অনেকবার চেঁচামেচি করা লেগেছে আমাদের।রাত ১টার দিকে গোসল শেষ করে এসিল্যান্ড তৌহিদের ইমামতিতে আমি, ইউএইচএফপিও জহিরুল ভাই, ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টুলু সাহেবসহ মেডিকেল টিমের সদস্যসহ কয়েকজন আমরা জানাজা সম্পন্ন করি।

কাদামাটির উঠান, জঙ্গল ঠেলে রাত দেড়টার দিকে মৃত সোহরাব হাওলাদার সাহেবকে নিয়ে যাই তার ঘরের কাছে। সেখানে গিয়ে তার এক ভাইকে পাই। যদিও কবরে কিন্তু সেই গোরখোদক মনিরসহ আর দুইজন নামল যারা আত্মীয় না। রাত দুই টায় বাড়ি ফিরলাম, মনে হলো শরীর অসম্ভব ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়বো। এখন পৌনে সাতটা বাজে ঘুম আসছে না।

মৃতদেহ থেকে ভা’ইরাসটি ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে বলে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে। একদম স্যাম্পল নেয়া বা পোস্টমর্টেম এর সময় কেউ এক্সপোজ হতে পারে। মৃতদেহের চেয়ে একজন জীবিত কোভিড রোগী সংক্রমণ ছড়াবে বেশি, যিনি রাস্তা ঘাট বাজারে থাকতে পারেন। মৃতদেহের প্রতি এই ভয়টা যদি রাস্তায় থাকতো হয়তো সংক্রমণ আরো কিছু কম হতো।কোন হতভাগ্যের যেন এরকম না হয়।

ধন্যবাদ ইউএইচএফপিও ডাঃ জহিরুল ভাই, ছোট ভাই এসিল্যান্ড তৌহিদ, ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু সাহেব। ওই রাতে এরকম ভাবে একজন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব না নিলে মৃতদেহটি আজও পড়ে থাকতো। এখনো পড়েই থাকতো ওই ঘরেই। পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ, মেডিকেল টিমের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ।

যে ব্যক্তিটি মারা গেলেন তিনি কিন্তু নিশ্চিত করোনা রোগী না। সন্দেহেই এই অবস্থা। আমাদের হয়তো এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে আরও। তবে আশা করি এরকমটি আর না ঘটে। সবাই ভালো থাকুক। আবার ভোর হোক। নির্ঘুম রাতের ভোর না, পরিতৃপ্ত ঘুমের স্নিগ্ধ ভোর হোক।

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button