কর্মহীন হয়ে রাজধানী ছাড়ছে অনেকই !!

করোনার করাল গ্রাসে অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। কোনোটি এখনও বন্ধ, কোনোটি চালু হলেও হয়েছে অনেক ছোট পরিসরে। ফলে অনেক কর্মীকেই চাকরি হারাতে হয়েছে বা হচ্ছে। ছোটখাটো ব্যবসা করতেন এমন অনেকে গত তিন মাসের লোকসান সামলে উঠতে পারছেন না। তাদের কেউ সপরিবারে ফিরে গেছেন গ্রামের বাড়ি, কেউ স্ত্রী-সন্তানকে পাঠিয়ে শুধু নিজে রয়ে গেছেন। প্রায় সবাই ছেড়ে দিয়েছেন ঢাকা বা নগরীর উপকণ্ঠের বিভিন্ন এলাকার ভাড়া বাসা।

এদের কেউই জানেন না পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে বা একটু স্বাভাবিক হলেও স্বজনদের আবারও ঢাকায় নিয়ে আসতে পারবেন কিনা?তরুণ সমাজকর্মী এম রুবায়েত হোসেন সমকালকে বলেন, করোনাভা’ইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তেমনি জীবিকা নিয়েও বিপদে পড়েছেন বিশেষত মধ্য ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ। সবকিছু সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হলেও একটি প্রতিষ্ঠানের সব কর্মী চাকরি ফিরে পাচ্ছেন না। অনেককে স্পষ্টভাবেই না করে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেককে বলা হয়েছে কিছুদিন পর ডেকে নেওয়া হবে। এমন অবস্থায় আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে লোকজন গ্রামে ফিরে যাচ্ছে।

করোনা পরিস্থিতিতে মার্চের শেষে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর প্রথমে অস্থায়ীভাবে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন অনেকে। ছুটি শেষে ফিরবেন ভেবে গেলেও পরে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকায় পরিকল্পনা বদলে যেতে থাকে। কর্মহীন হতে থাকেন অনেকেই। তেমনই এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে থাকতেন উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন প্রিয়াঙ্কা সিটিতে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি বিমান সংস্থার ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম এজেন্ট ছিলেন তিনি। বিমান চলাচল বন্ধের দুই সপ্তাহ পর প্রতিষ্ঠানটি বেশকিছু কর্মীকে ছাঁটাই করে। দুর্ভাগ্যবশত তিনিও তাদের একজন। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে চাকরি পাওয়ারও সুযোগ ছিল না। বাড়ি ভাড়া নিয়েও বাড়িওয়ালার সঙ্গে বিতর্ক হয় তার। শেষে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি জানান, মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ১৯ মে ঢাকা ছেড়েছেন। সঙ্গে ট্রাকে করে নিয়ে গেছেন আসবাবসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। চাকরির ব্যবস্থা না হলে তার ঢাকায় ফেরা অনিশ্চিত।

একটি পোশাক কারখানায় সহকারী ব্যবস্থাপক (স্টোর) হিসেবে কাজ করেন রবিউল ইসলাম। পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে থাকতেন সাভারের ফুলবাড়িয়া এলাকায়। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাত্র ৬৫ ভাগ বেতন পেয়েছেন। অনিশ্চয়তার কারণে ঈদের এক সপ্তাহ আগে মা, ভাই, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে চলে যান। সম্প্রতি কারখানা খুলে দেওয়ায় তিনি এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। চোখের সামনেই দেখছেন, কর্মীদের কেউ কেউ অসুস্থ থাকলেও চাকরি হারানোর ভয়ে তা চেপে যাচ্ছেন। কেউ প্যারাসিটামল খেয়ে, কেউ সাপোজিটর নিয়ে তাপমাত্রা কম দেখিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে এখন চাকরিতে বহাল থাকবেন কিনা, কী হারে বেতন পাবেন- এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সবাই।

সূত্র- সমকাল

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *