‘কলঙ্ক’ মুছে করোনার ভ্যাকসিন আনতে পারবে কি চীন ??

ভুয়া ভ্যাকসিন তৈরি করে শিশুদের পঙ্গু করা। কখনো আবার পশু-পাখির ভ্যাকসিন মানুষকে দিয়ে সমালোচনায় পড়া। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে চীনের এমন অতীত কলঙ্ক এখন সামনে আসছে নতুন করোনাভা’ইরাসের কারণে। কভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধ করতে দেশটি এবার সর্বস্ব উজাড় করে লড়াইয়ে নেমেছে।

এএফপি জানিয়েছে, করোনার ভ্যাকসিন আনতে চীন রীতিমতো তাড়াহুড়া করছে। কয়েকটি কোম্পানিকে সরকার একসঙ্গে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালের অনুমতিও দিয়েছে!দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে চীনের মিলিটারি একাডেমি অব মেডিকেল সায়েসেন্স একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই ভ্যাকসিনটি নিয়ে দেশটি খুব আশাবাদী।

চীন সরকার জানিয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ তাদের ভ্যাকসিন প্রস্তুত হতে পারে। বেশি সময় লাগলে সামনের জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপ বেশি চ্যালেঞ্জিং। এই দুই ধাপে একসঙ্গে অনেক মানুষকে যুক্ত করা হয়। চূড়ান্ত ঝুঁকি এখানেই বোঝা যায়।

বিপদ এড়াতে তাই প্রতিটি ধাপ সাধারণত আলাদা-আলাদা সময়ে শেষ করা হয়।এক সঙ্গে দুই ধাপের ট্রায়াল শুরু করায় বেইজিং-ভিত্তিক গবেষক ডিং শেং সমালোচনা করেছেন, ‘বুঝতে পারছি পৃথিবী ভ্যাকসিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তাই বলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি উপেক্ষা করা ঠিক নয়।’

ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের সঙ্গে যুক্ত নিক জ্যাকসন আবার বলছেন, ‘শুধু আমরা নয়। বিশ্বের অনেক সংস্থা এভাবে ট্রায়াল দিচ্ছে। হাতে সময় কম। মানুষকে বাঁচাতে হলে এর বিকল্প নেই।’এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের ভ্যাকসিন নিয়ে দেশটির সাধারণ মানুষও চিন্তিত। কারণ তাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অনেক জায়গায় এটি নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে।

ভ্যাকসিন নিয়ে চীন সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারিতে পড়ে ২০১৮ সালে। চাংচুন চাংশেং বায়োটেকনোলজি নামের একটি কোম্পানি জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন মানুষকে দিয়ে ১.৩ বিলিয়ন ডলার জরিমানায় পড়ে।এই কোম্পানি ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং হুপিং কাশির ভ্যাকসিন প্রস্তুত করে ২ লাখ শিশুকে দেয়। তার মধ্যে অনেকের পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইসিস হয়ে যায়!

এখন নভেল করোনাভা’ইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করা আরেকটি কোম্পানিরও এমন কেলেঙ্কারি আছে। উহানের ওই বায়োটেকনোলজি কোম্পানি গত বছর ডিপথেরিয়ার ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সময় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেনি বলে অভিযোগ ছিল।

চীনের দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি গবেষক লুং-জি চ্যাং অবশ্য বলছেন এ যাত্রায় তারা সতর্ক, ‘কভিড-১৯ রোগের ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে সরকার খুব সতর্ক। আগের ঘটনাগুলোর কারণে এবার ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবো না, বিষয়টি এমন নয়। আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। আশা করছি দ্রুত সফল হবো।’

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *