কাজে আসছে না বহুমুখী উদ্যোগ, ফের লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম…!!

ফের দেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। আবারও ধাপে ধাপে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে পেঁয়াজের। এর ফলে জনমনেও চাপাক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। পেঁয়াজের সংকট কাটাতে সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোন উদ্যোগেই সুফল আসছে না। তবে পেঁয়াজের সংকট দূর করতে তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান থেকে আমদানি করার ফলে ২৭০ টাকা থেকে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ১৬০ টাকা কেজিতে নেমে আসে পেঁয়াজের দর। তবে তা স্থায়ী হয়নি, ফের দাম বৃদ্ধির ফলে আগের মতই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, ব্যবসায়ীদের পিয়াজ আমদানি, বাজার নিয়ন্ত্রণের নানা ঘোষণার কোনো সুফলই দেখছেন না ক্রেতারা। সরকারের বহুমুখী উদ্যোগ ও তদারকির পরও পেঁয়াজের দামের পাগলা ঘোড়া থামানো যাচ্ছে না। সোমাবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে সোমাবার (২৫ নভেম্বর) পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও দর কারসাজির অভিযোগ ইস্যুতে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে হাজির হয়েছেন ১৩ জন পিয়াজ আমদানিকারক। সোমবার কাকরাইলের শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে তারা হাজির হন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গোয়েন্দা অধিদপ্তর থেকে তাদের ডেকে পাঠানো হয়। গতকাল ও আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর ) পেঁয়াজ আমদানিকারকদের স্ব-শরীরে সংস্থাটির কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।

গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে ৪৭ আমদানিকারককে শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে তলব করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সোমবার কাকরাইলের শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে ১৩ আমদানিকারক তাদের বক্তব্য তুলে ধরছেন। আমদানিকারকদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী দাম বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ যাচাই করা হবে। এরপর দায়ীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সেগুনবাগিচায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে শুনানি চলে। এরপর আধা ঘণ্টার বিরতি দেওয়া হয়। বিরতির পর আবার শুনানি শুরু হয়। বিরতির সময় আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আব্দুল আওয়াল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, যাদের ডাকা হয়েছিল, তাদের মধ্যে আমাদের চারজনের শুনানি শেষ হয়েছে। আমদানিকারকদের কারসাজির জন্য পেঁয়াজের দাম লাগামহীন হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুনানি শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

সোমবার শুনানিতে আসা ১০ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, রাজশাহীর এমএস পিল মোহাম্মদ ট্রেডার্স, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একতা শস্য ভাণ্ডার, এমএস সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ, নূর এন্টারপ্রাইজ, এমএস আ এম অ্যাগ্রো, টিএম এন্টারপ্রাইজ ও বিএইচ ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানি, সাতক্ষীরার এমএস দীপা এন্টারপ্রাইজ প্রোপার্টিজ, নওগাঁর জগদীশ চন্দ্র রায় এবং বগুড়ার এমএস সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ। এদিকে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতোমধ্যে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। পাকিস্তান থেকে বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানি করেছে। এছাড়া মাঠে প্রশাসনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার তদারকিতে নেমেছে। তারপরও দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের পিয়াজ বিক্রেতা রবিউল জানান, বাজারে দেশি পিয়াজের সরবরাহ কম, যা আছে তার চড়া দাম। এরসঙ্গে অন্য পেঁয়াজেরও দাম বেড়েছে। যেসব ব্যবসায়ীরা সোমবার পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনেছেন, তারা ২৫০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। কারন এখন পাইকারি বাজারে দাম অনেক বেশি। এদিকে বাজারে পাতা সহ দেশি পিয়াজের দামও বেশ চড়া। এসব পিয়াজ ১০০ টাকা থেকে এখন ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় পিয়াজ বাজারে কম আসায় দাম বাড়তি।

শ্যামবাজারের আমদানিকারক পাইকারি পিয়াজ বিক্রেতা সেলিম বলেন, বাজারে আমদানি না থাকায় দাম বেশি। এর আগে ভারতের পিয়াজ সরবরাহ বেশি ছিল, তাই দাম কম ছিল। এখন সেটা নেই। তাছাড়া উড়োজাহাজে আসা পাকিস্তানি পেঁয়াজের দামও বেশি। তবে বাজারে আমদানি বেশি হলে দাম কমে আসবে। অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় অব্যাহত রয়েছে টিসিবির খোলাবাজারে ট্রাকসেলে পিয়াজ বিক্রি। দীর্ঘ সময় ধরে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। ক্রেতার ভিড় থাকায় বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। প্রতিদিন টিসিবির একটি ট্রাকে এক হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিক্রি অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *