কোথায় ছিলেন? কীভাবে ফিরলেন? আর কীভাবে ধরা পড়লেন এই মাজেদ ??
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হ’ত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। সোমবার (৬ এপ্রিল) মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রে’ফতার করে পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সংস্থা বলেছিল, তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। তবে তিনি কোন দেশে ছিলেন, কীভাবেইবা দেশে ফিরলেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। এমনকি দেশের কোন বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর দিয়ে কীভাবে দেশে ফিরলেন, এ বিষয়েও কেউ কোনো তথ্য জানাতে পারছেন না।
এতোদিন মাজেদ কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে পুলিশ সদরদফতরের পুলিশ সুপার সমমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, তাকে ধরতে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) ও পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট অভিযান চালিয়েছে, তারা বিস্তারিত বলতে পারবে। আর কারও কাছে কোনো তথ্য নেই।তবে ডিবি ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান দুই ব্যক্তিকে ফোন করে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু হ’ত্যার পর বেশ ক’বছর দেশে থাকার পর হঠাৎ দেশছাড়া হয়ে গাঢাকা দেন মাজেদ। প্রতি বছর ১৫ আগস্ট ‘বঙ্গবন্ধুর হ’ত্যা’ ও ‘আসামিরা কে কোথায়’ এসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হতো। ২০১৮ সাল পর্যন্ত পুলিশ সদরদফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) বিভাগের কাছে মাজেদের বিষয়ে কোনো তথ্য ছিল না। সরকারের কাছেও তার অবস্থা সম্পর্কে ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য।
২০১৯ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো এনসিবির সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সর্বশেষ তার অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানে বলে শোনা যাচ্ছিল। তখন দুই দেশকে চিঠিও দেয়া হয়। জবাবে ভারত বলেছিল, মাজেদ তাদের দেশে নেই। তবে পাকিস্তান কোনো জবাব দেয়নি।
এতোদিন কোথায় ছিলেন
গ্রে;ফতার হওয়া মাজেদ পুলিশের কাছে বলেন, গ্রে’ফতার এড়াতে দীর্ঘদিন তিনি ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আ’ত্মগোপনে ছিলেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ আদালতে তোলার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখন মাজেদ তাকে বলেন, গ্রে’ফতার এড়াতে তিনি গত ২০ থেকে ২২ বছর ধরে কলকাতায় আ’ত্মগোপনে ছিলেন।
কীভাবে ফিরলেন
আদালতে আইনজীবীর জিজ্ঞাসাবাদে কিছু না বললেও আইন-শৃঙ্খলার বাহিনী ধারণা করছে, করোনাভাইরাসের কারণে ভারত থেকে অনেককেই পুশ ব্যাক করা হয়েছে। সে কারণে সেখান থেকে ২৬ মার্চ ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকতে পারেন মাজেদ। এর আগে লিবিয়া ও পাকিস্তানে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালের দিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান তিনি। সেখান থেকে পাকিস্তানে, এরপর লিবিয়ায়। সেখান থেকে ২০১৬ সালে আবারও ভারতে ফেরেন তিনি।
যেভাবে গ্রে’ফতার
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপ-পরিদর্শক জহিরুল হক আদালতকে জানান, সোমবার দিবাগত রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে আবদুল মাজেদকে গাবতলীতে রিকশায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তখন সন্দেহ হয় পুলিশের। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মাজেদ জানান, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হ’ত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে খুন হন বিপথগামী কিছু সেনার হাতে। এরপর তার হ’ত্যাকারীদের ফাঁ’সি হলেও মাজেদসহ ৬ জন দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন। মাজেদ ধরা পড়ায় পলাতক বাকিরা হচ্ছেন রাশেদ চৌধুরী, নূর চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, কর্নেল রশীদ, মুসলেহউদ্দীন রিসালদার।
সূত্রঃ জাগো নিউজ