খেজুরের রস থেকে সাবধান, জেনে নিন যে ভাইরাসের আশঙ্কা !!

আসন্ন শীতে কাঁচা খেজুরের রস থেকে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, নিপাহ মরণব্যাধি। এই রোগ নিপাহ নামক ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। নিপাহে আক্রান্তের সংখ্যা খুব একটা বেশি না হলেও এতে মৃতের হার বেশি। যা প্রায় ৭০ শতাংশ। নিপাহের এখন পর্যন্ত কোনো টিকা ও সুনির্দিষ্ট চিকিত্সা নেই। তাই সতর্কতা ও সচেতনতাই এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে খেজুরের রস ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। নিপাহ একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। ১৯৯৮-৯৯ সালে নিপাহ ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় মালয়েশিয়ার সুঙ্গাই নিপাহ নামক গ্রামে।

ঐ গ্রামের নামেই ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়। মূলত ফলাহারি বাদুড় এই ভাইরাসের প্রধান বাহক। তবে ফলাহারি বাদুড় নিজে ঐ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। আমাদের দেশে নিপাহে আক্রান্ত হওয়ার মূল উত্স খেজুরের রস। খেজুরের রস গাছের মধ্যে হাঁড়িতে সংরক্ষণের সময় বাদুড় ঐ রস পান করলে এবং পরে রসের মধ্যে তার লালা বা প্রসাব থেকে রস সংক্রামিত হয়। ঐ রস পান করলে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। বাদুড়ে খাওয়া থেকে খেজুরের রসকে রক্ষা করা গেলে নিপাহ হবে না। বাদুড়ে খাওয়া ফল থেকেও নিপাহে আক্রান্ত হতে পারে। অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি বা সংস্পর্শ এলেও এ রোগ ছড়ায়। রোগীর গামছা, বিছানা বা কাপড় অন্য কেউ ব্যবহার করলে, তারও নিপাহ হতে পারে। আমাদের দেশে দেখা গেছে, মৃত রোগীর মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায়। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত খেজুরের রস খাওয়ার ছয়/সাত দিন পর নিপাহে আক্রান্ত হয়। আর আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিপাহ ছড়াতে সময় রাগে ১০ থেকে ১৫ দিন।

দেশে ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মোট ৩১৩ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ২১৭ জন। চলতি বছর ২০১৯ সালে ৮ জন নিপাহে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে চার জন মারা যায়। এই আট জনের মধ্যে পাঁচ জন ছিল একই পরিবারের। নিপাহে মস্তিষ্কে ইনফেকশন ছাড়াও রোগীর শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও মাথাব্যথা হয়। মালয়েশিয়ায় নিপাহে মৃত্যু হার ৪০ শতাংশ হলেও আমাদের দেশে মৃত্যু হার ৭০ শতাংশ। দেখা গেছে আমাদের দেশের নিপাহ ভাইরাস শক্তিশালী।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, শীতকাল এলেই রাজধানীসহ দেশে শুরু হয় খেজুরের রস খাওয়ার উত্সব। সেখানে কাঁচা খেজুরের রসই সবাই পান করে থাকে। তবে এই খেজুরের রস ফুটিয়ে পান করলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঘটনা ঘটে জানুয়ারি থেকে মার্চে। তাই আমরা ধরেই নেই খেজুরের রস যেহেতু ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পাওয়া যায়, সেখান থেকে নিপাহে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, তাই এ সময়ে খেজুরের রস বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য কাঁচা খেজুর রসের পরিবর্তে জ্বাল দিয়ে রস খাওয়াটাকেই উত্সাহিত করতে হবে।

আইইডিসিআরর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, নিপাহে আক্রান্তের সংখ্যা খুব একটা বেশি না হলেও এতে মৃতের সংখ্যা অনেক। ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩১৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ২১৭ জন। মৃতের হার ৭০ শতাংশ। আই ইডিসিআরর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. শারমীন সুলতানা বলেন, নিপাহ একটা ভাইরাসজনিত রোগ। এই ভাইরাস ফলাহারি বাদুড় থেকে ছড়ায়। এর লক্ষণ হচ্ছে—জ্বর, মাথাব্যথা, প্রলাপ বকা, অজ্ঞান ও শ্বাসকষ্ট হওয়া। তিনি বলেন, এজন্য কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া এবং কারো কাছে কাঁচা খেজুরের রস বিক্রি করা উচিত নয়। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। নিপাহর কোনো চিকিত্সা নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাও কেবল আইসিডিডিআর,বি ও আইইডিসিআর এ রয়েছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *