গণভোটের দাবি অস্বীকার করলেন মমতা !!

রাশমণি অ্যাভিনিউতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির পক্ষে মানুষ আছে কিনা, তা প্রমাণে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গণভোটের দাবি তোলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে গণভোট নিয়ে মন্তব্য করার পর শুক্রবার নিজের অবস্থান পাল্টালেন তিনি। গণভোট নিয়ে তার মন্তব্যের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী যেন প্রত্যাহার করে নেন ওই মন্তব্য।

মমতা বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গণভোটের কথা বলিনি। জনমত সমীক্ষা করতে বলেছি। একই সঙ্গে তিনি ওইদিন প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে সিএএ বাতিলের আবেদন জানান। এদিকে ভারতজুড়ে নাগরিক সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনকে (এনআরসি) কেন্দ্র করে প্রতিবাদ চলছে। শুক্রবার (২০ডিসেম্বর) এ বিক্ষোভে উত্তর প্রদেশে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। দাবি মানা ছাড়া আন্দোলনের ময়দান ছাড়বে না ভারতের বিজেপি ও এনডিএবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও গড়ে তুলেছেন আন্দোলন। সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত টানা তিন দিন তিনি প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। মমতা বলেন, সবাইকে ভয় দেখিয়ে, সংবিধান না মেনে যা ইচ্ছা করে দেয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, দিল্লি বিজেপি শাসিত রাজ্যে ১৪৪ ধারা দেয়া হয়েছে। যত দিন যাবে বাংলার মাটিতে আন্দোলন আরো বাড়বে। এ আন্দোলন নিজের অস্তিত্বের আন্দোলন। যত দিন যাবে বিজেপি তত ধাক্কা খাবে। তাই ধাক্কা সামলাতে হলে গণভোট হোক। জাতিসংঘের অধীনে হবে ভোট। একটা কমিটি তৈরি করে হোক ভোট।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মমতা বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আর অপেক্ষা কেন? যদি বুকের পাটা থাকে, তবে দেশে এ ইস্যুতে একটা গণভোট হয়ে যাক। আর সেই গণভোট করবে নিরপেক্ষ সংস্থা জাতিসংঘ। এখানে জড়িত থাকবে না তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, বাম দল এবং ভারতের অন্য কোনো রাজনৈতিক দল। থাকবে না কোনো সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। এই লক্ষে জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার কমিশনের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠন করতে হবে একটি কমিটি। তারাই করবে এই গণভোট। আমরা দেখতে চাই, কটা মানুষ মানছে এই সিএএ এবং এনআরসি আর কটা মানুষ মানছে না।

কিন্তু ভোল পাল্টে গতকাল জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমি পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেসের সদর দপ্তরে দলীয় নেতা, সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিরপেক্ষ সংস্থার কথা বলেছিলাম। উদাহরণ হিসেবে জাতিসংঘের নাম উল্লেখ করেছি। আমি চাই, নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে জনমত সমীক্ষা করা হোক। মমতা বলেন, যে আইন মানুষের বিরুদ্ধে যায়, সেই আইন নিয়ে জেদাজেদি করা উচিত নয়। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সবার এগিয়ে আসা উচিত।

মানুষের আন্দোলন মেনে নিন। দয়া করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন।’ তিনি বলেন, ৭৩ বছর পর আমাদের প্রমাণ করতে হবে আমরা নাগরিক কি নাগরিক না- এটা খুব লজ্জার। বিজেপির নেতারা দেশের স্বাধীনতার আন্দোলন করেননি। দেশ ভাগাভাগি করছে এখন। এ সময় ‘ সিএএ’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে, চলবে’, স্লোগান তোলেন তৃণমূলের প্রধান। এর আগে সভায় কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে একত্রে ‘আমরা সবাই নাগরিক’ স্লোগান তোলার পর তিনি নিজে ব্ল্যাকবোর্ডে ‘নাগরিক সবাই’ লিখে তার নিচে ছবি এঁকে দেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *