চাপের মুখে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নতুন ব্যাখ্যা দিল ভারত সরকার !!

গত তিনদিন ধরে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। উত্তপ্ত উত্তর প্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তিন দিনের সহিংসতায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। গত সপ্তাহে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাস করার পর থেকে দেশটির বিভিন্ন স্থানে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে উত্তর প্রদেশে ১০ জন, আসামে তিনজন, বেঙ্গালুরুতে দু’জন এবং লখনৌতে একজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) উত্তর প্রদেশে একজন নিহত হন।

এদিকে শনিবার ভিম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। সংঘর্ষের কারণে জেলায় জেলায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দিল্লির জামিয়া মিলিয়ার শিক্ষার্থীরা ফের বিক্ষোভ শুরু করার খবর পাওয়া গেছে। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ ঘিরে উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তর প্রদেশ সবচেয়ে বেশি অশান্ত হয়ে উঠেছে। এখানে শুক্রবার প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। শনিবার সকাল থেকে রাজ্যের রামপুরে বিক্ষোভ শুরু হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এদিন একজন নিহত হয়। ব্যাপক ও অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিক তালিকা নিয়ে সুর নরম করেছে বিজেপি সরকার। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নতুন ব্যাখ্যা : ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে নতুন ব্যাখ্যা হাজির করেছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া ব্যাখ্যায় নাগরিকত্ব পাওয়ার কয়েকটি শর্ত নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যারা ভারতে জন্মেছেন তারা সবাই ভারতের নাগরিক। এ ছাড়া ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে যারা জন্ম নিয়েছেন এবং যাদের বাবা-মায়ের মধ্যে কোনো একজন ভারতের নাগরিক তিনিও ভারতীয়। পাশাপাশি ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের পর যারা জন্মেছেন এবং যাদের বাবা-মা দু’জনেই ভারতের নাগরিক কিংবা একজন ভারতীয় নাগরিক এবং অন্যজন একই সময়ে ‘অনুপ্রবেশকারী’ নন, তারাও ভারতের নাগরিক হিসেবেই গণ্য হবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, দেশজুড়ে এনআরসি চালু করার সময় যে নিয়মকানুন তৈরি হবে, তাতে বৈধ নাগরিকদের কারও কোনো সমস্যা হবে না। জন্মের নথি বা স্কুলে পড়ার নথি দাখিলের মাধ্যমে নাগরিকত্বের আবেদন করা যাবে। নিরক্ষর ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। তাদের ক্ষেত্রে জন্মের সাক্ষী থাকা কোনো ব্যক্তি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রশংসাপত্রের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের আবেদন করা যাবে। দেশজুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরি হওয়ার পর তাতে নাম উঠলে মিলবে ন্যাশনাল সিটিজেনশিপ কার্ড (এনসিসি)। ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড নয়, এনসিসিই হবে এ দেশের নাগরিক হওয়ার পরিচয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাখ্যা নিয়েও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকে। তাদের ভাষ্য, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে জন্মের নথি বাধ্যতামূলক ছিল না; নথি না থাকলে তারা এখন কী দেখাবেন? এ ছাড়া ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের পরে জন্মানো কেউ যদি বাবা বা মায়ের মধ্যে কোনো একজনকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে না পারেন তা হলে তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু তিনি যেহেতু ভারতে জন্মেছেন, তাই অমুসলিম হলেও নিজেকে শরণার্থী হিসেবে দাবি করে নয়া নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা নিতে পারবেন না। শুক্রবার ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *