ছড়িয়ে পড়ছে এইডস, নেপথ্যে রোহিঙ্গা !!
দলবেঁধে কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিবিরে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয়রাও রয়েছে এইডস ঝুঁকিতে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশেও।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টার বলছে, কক্সবাজারে বর্তমানে এইডস রোগীর সংখ্যা ৫৩৮ জন। এর মধ্যে ৩৯৫ জনই রোহিঙ্গা। এক বছর আগেও এই রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১১ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হলে এইডস রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
জাতিসংঘের এইচআইভি এইডস বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের গত বছরের প্রাক্কালে বলেছিল, বাংলাদেশে এইচআইভিতে আক্রান্তদের অনুমিত সংখ্যা ১৩ হাজার। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ৬ হাজার ৪৫৫ জন শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তের বাইরে থাকা মানুষ চিকিৎসাও নিচ্ছে না, অন্যদিকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছে।
এদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে এইডস রোগের বড় ঝুঁকিতে পড়েছে পর্যটন শহর কক্সবাজার। আক্রান্ত সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টারের তথ্যমতে, জেলাটিতে বর্তমানে এইডস রোগী সংখ্যা ৫৩৮ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গাই ৩৯৫ জন। অথচ এক বছর আগেও স্থানীয় জনগোষ্ঠীসহ রোগী ছিলেন ৪১১ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের হার খুব বেশি। তাদের থেকে রোগটি প্রভাব ফেলছে স্থানীয়দের মধ্যেও। এছাড়া সঠিক এবং বিশালভাবে এইচআইভি স্ক্যান করা হলে এ সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বাড়বে বলে তাদের ধারণা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ও এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টারের ফোকাল পারসন ডা. শাহীন আব্দুর রহমান বলেছেন, ২০১৫ সাল থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এইচআইভি বা এইডস স্ক্যান করার কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গা আসার পরে ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে ৫৩৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।
এদের মধ্যে ৩৯৫ জন রোহিঙ্গা। আক্রান্ত ৫৩৮ জনের মধ্যে ২১৯ জন পুরুষ, ২৫৫ জন নারী, ৬৩টি শিশু এবং একজন হিজড়া রয়েছেন। অথচ গত বছর ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪১২ জন। ২০১৭ সালে ছিল ১৩২ জন। এছাড়া এরইমধ্যে রোগটিতে মারা গেছেন ২৯ রোহিঙ্গাসহ ৭২ জন। তবে এইডস প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডা. শাহীন আব্দুর রহমান।
তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে সদর হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালু করা হয়েছে। যেখানে মানুষের এইডস নির্ণয়, কাউন্সিলিং এবং চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ডা. শাহীন বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে এর বাইরে যারা আছে, তাদের কীভাবে টেস্টিং এবং ট্রিটমেন্টের আওতায় নিয়ে আসা যায়, সে জন্য আমরা কাজ করছি। ন্যাশনাল এইডস বা এসটিডি কর্মসূচি নামে একটি প্রকল্প চালু আছে। এছাড়া ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ইউনিসেফের সহযোগিতায় হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের জন্য ‘প্রিভেনশন মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (পিএমসিটি)’ নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করা হয়। এই প্রোগামে এইচআইভি পজেটিভ গর্ভের সন্তানটি যেন এইচআইভি নেগেটিভ হয়, সে লক্ষ্যে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত এটি একটি ফলপ্রসূ উদ্যোগ।
শাহীন আব্দুর রহমানের মতে, রোহিঙ্গা থেকে সদর হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন, তাদের বেশির ভাগই মিয়ানমারে থাকতেই এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে আবার নিশ্চিত করা হচ্ছে। এরপর তাদের চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেছেন, বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে আমরা জেনেছি প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা তরুণী ইতোমধ্যে পযর্টন শহরটির বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা পযর্টন শহর। এখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভ্রমণে আসছেন। তাই বলতে হবে, রোহিঙ্গাদের কারণে শুধু কক্সবাজার নয়, সারাদেশে এইডসের ভয়াবহ বিস্তার ঘটতে পারে। এই আশঙ্কায় আমরা উদ্বিগ্ন।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মান্নান বলেছেন, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের পাশাপাশি উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের নানা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সচেতনতার বিকল্প নেই বলে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে আক্রান্ত হার যেরকম, সে তুলনায় যা শনাক্ত হয়েছে, তা কিন্তু একেবারেই অপ্রতুল। বাস্তবে এ সংখ্য আরও অনেক গুণ বেশি হবে।
এইডস প্রতিরোধে জেলা সদর হাসপাতালে নানা উদ্যোগের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ১২টি টিম কাজ করছে বলে জানান সিভিল সার্জন আব্দুল মতিন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আসা নতুন-পুরনো মিলে এখন ১২ লাখ রোহিঙ্গা শুধু কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের ৩৪টি অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছেন। আর কক্সবাজার সদরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। যারা সবাই এইচআইভি ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।