জন্মান্ধ মিজানুরের৫ মুখস্থ হাজার মোবাইল নাম্বার !!
জন্ম থেকে দুই চোখ অন্ধ মিজানুর রহমানের। আত্মবিশ্বাস ও প্রবল স্বরণশক্তির মাধ্যমে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশে টাকা লেনদেন করাসহ প্রায় ৫ হাজার মোবাইল ফোন নম্বর মুখস্থ বলতে পারে। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের প্রত্যান্ত অঞ্চল টাঙ্গারিপাড়া গ্রামের তার জন্ম। বাবার নাম মোনতাজ আলী ও মায়ের নাম মোমেনা খাতুন। দুই ভাই বোনের মধ্যে মিজানুর বড়। আশ্চর্য্য বিষয় হচ্ছে অত্র এলাকার পরিচিত সকল মানুষের মোবাইল নম্বর তার মুখস্থ। ফ্লেক্সিলোড করতে গেলে নম্বর না বলে ব্যক্তির নাম বললেই টাকা চলে যায় মোবাইলে ফোনে।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ায় ইচ্ছা থাকার পরেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি। এমন দুঃখ তাকে ক্ষতবিক্ষত করে। তাই বাধ্য হয়ে টাকা উপার্জনের পথে নামে। কিন্তু শুরুর দিকে তাকে নানা ধরনের অবহেলার শিকার হতে হয়। কিন্ত শেষ পর্যন্ত মেধা ও স্বরণশক্তি দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে। এখন সে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা করে পরিবারের অর্থ সংকট অনেকটা কমিয়েছেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফ্লেক্সিলোড করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে অন্ধ মিজানের। দীর্ঘ দিন ধরে এ কাজ করলেও একবারও ভুল করেনি এবং সারা দিনের হিসাব মুখস্থ থাকে তার।
মিজানুর রহমান বলেন, কোন বাটুনে কোন সংখ্যা এটা মোবাইল সেটের উপর হাত রেখে বলে দিতে পারি। ব্যবহার করতে করতে আমার সব জানা হয়ে গেছে। ফ্লেক্সিলোড করার ক্ষেত্রে মোবাইলে কোন বাটুন টিপতে হবে, কোন অপশনে যেতে হবে-সেটাও আমার জানা হয়ে গেছে। বর্তমামানে আমি উনম্যাক্স, ওয়ালটন ও নোকিয়া কোম্পানির সেট ব্যবহার করছি। এতে আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না। বিকাশে (ব্র্যাক ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং) বা রকেটে (ডাচবাংলা মোবাইল ব্যাংকিং) টাকা পাঠাতে কোন সমস্যা নেই। শুধু ইনকামিংয়ের ক্ষেত্রে আমাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি হট লাইনে কথা বলে নিশ্চিত অথবা অন্য কারো সহযোগিতা নিতে হয়। বর্তমান সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন, অন্ধ দুই চোখের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করলে পৃথিবীর আলো দেখতে পারবো এবং অর্থ উপার্জন কওে বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভরণ-পোষণে সহযোগিতা করতে পারবো।
মিজানের বাবা মোনতাজ আলী বলেন, সে জন্ম থেকেই অন্ধ। চিকিৎসার জন্য তাকে উলিপুর, রংপুর ও দিনাজপুর চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেছি। চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার চোখের অপারেশন করতে চেয়েছিল, কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে মিজানের অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরোও অভিযোগ করে বলেন, মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে কয়েকবার গিয়েছিলাম তারা আমার ছেলেটাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন সাহায্য করেনি। বন্দবেড় ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান কবীর হোসেন জানান, এ বিষয় আমি জানিনা, তবে খোঁজ খবর নিয়ে আমার পরিষদ থেকে যতটুকু সাহায্য সহযোগীতা করা যায় আমি তা করার চেষ্টা করবো।