জব্দ হয় জাটকা মাছ, দিয়ে দেওয়া হল এতিমখানায় !!
জাটকাসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রজাতির মাছের ডিম, লার্ভি ও পোনা রক্ষায় দেশের ১৩টি জেলায় সম্মিলিত বিশেষ অভিযান চলছে। এসব অভিযানে প্রায় ২ হাজার ৬’শ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। জব্দ করা এসব জাটকা মাছ ১৩টি জেলার বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। রোববার (১২ জানুয়ারি) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ১৩টি জেলায় এসব অভিযান চালানো হচ্ছে। জেলাগুলো হল: ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, বরগুনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মুন্সীগঞ্জ এবং পিরোজপুর। এসব অভিযানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, নৌপুলিশ এবং কোস্টগার্ডসহ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করছেন।
জানা যায়, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধে গত ৭ জানুয়ারি থেকে প্রথম ধাপে এ অভিযান শুরু হয়।, যা শেষ হবে আগামী ১৩ জানুয়ারি। অভিযান শুরু হবার পর থেকে মোট ৫ দিনে এখন পর্যন্ত ৯১৭টি বেহুন্দি জাল, চার কোটি ২৩ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, অন্যান্য ৬২৭টি অবৈধ জাল জব্দ করা হয়।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, ১৩১টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫৩০টি অভিযানে ৭৬৯টি মাছ ধরার নৌকা আটক করা হয়। এছাড়া ছয় লাখ টাকা জরিমানা এবং ২৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এদিকে, দ্বিতীয় ধাপে ২১ থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮ দিন সম্মিলিত এ বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে।
উল্লেখ্য, ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় এই মাছ বিশ্বে এক বিস্ময়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত জাটকা শিকারের ফলে এই মাছ একদম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিলো কিন্তু বর্তমান নানা ধরনের কর্মসূচী গ্রহণের ফলে এই মাছ আস্তে আস্তে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে।
ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নানান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী চালু রয়েছে। এসব কর্মসূচীর আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জাটকাসমৃদ্ধ ১৭ জেলার ৮৫টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসের জন্য মোট ৩৯ হাজার ৭৮৮ মেট্রিক টন চাল প্রদান করা হয়। জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময় ছাড়াও বিগত দুই অর্থবছরে মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন ২২ দিনের জন্য পরিবার প্রতি ২০ কেজি হারে মোট ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬২টি পরিবারকে মোট ১৪ হাজার ৮২৪ মেট্রিক টন ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়।
বর্তমানে দেশে জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য মৎস্য অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়িত জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্পের আওতায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৩২ হাজার ৫০৯ জন সুফলভোগীকে জাটকা ও পরিপক্ব ইলিশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা, হাঁস-মুরগি পালন, গরু-চাগল পালন, ভ্যান বা রিক্সা চালানো, সেলাই মেশিন, ইলিশ ধরার জাল প্রদান, খাঁচাই মাছ চাষ ইত্যাদি আয়মূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। তাছাড়া প্রকৃত মৎস্যজীবী ও জেলেদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিতকরণে মৎস্য অধিদফতর থেকে ইতোমধ্যে ১৬ লাখ ২০ হাজার মৎস্যজীবী ও জেলেদের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে এবং ১৪ লাখ ২০ হাজার জেলের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়।