জাকির নায়েককে দেশে আসতে যে ২ টি শর্ত দিয়েছিলেন মোদি !!

ভারতের বিতর্কিত ইসলামি বক্তা ডা. জাকির নায়েক দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সমর্থন দিলে তিনি দেশে ফিরতে পারবেন। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে করা মামলাও তুলে নেয়া হবে। কিন্তু তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হননি।

এজন্য জাকির নায়েককে দুটি শর্ত দেয়া হয়েছিল। প্রথমত: সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে হবে। দ্বিতীয়ত মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে তাকে সহযোগিতা করতে হবে।

গত শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিওবার্তায় এমন দাবি করেছেন তিনি।২০১৬ সালে ভারতে তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে উস্কানি দেয়া এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠলে মালয়েশিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নেন জাকির নায়েক। সেখানে তাকে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

ভারতে তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক প্রচারণার অভিযোগে মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় তাকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ঘোষণা করা হয়েছে।

জাকির নায়েক বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পক্ষ থেকে এক ব্যক্তি আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

তার দাবি, ভারত সরকার তাকে বলেছিল, কাশ্মীর নিয়ে সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন করতে। তাহলে তার বিরুদ্ধে সব মামলা তুলে নেয়া হবে। তিনি ভারতে ফিরতে পারবেন।

জাকির নায়েক আরও জানান, সরকার চেয়েছিল, তার নানা যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে।

তার দাবি, বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম নেতাকে হুমকি দিয়ে অথবা বেকায়দায় ফেলে সরকারের কথা মানতে বাধ্য করা হয়েছে।

ভিডিওতে জাকির নায়েক বলেন, ভারত সরকার তাদের এক প্রতিনিধির সঙ্গে আমাকে বৈঠকে বসতে বলেছিল। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ সপ্তাহে সে প্রতিনিধি আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার পরে সোজা আপনার কাছে এসেছি।’

বিতর্কিত এই বক্তার কথায়, ওই প্রতিনিধি আমাকে বলেন, নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর নির্দেশে আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আপনি যাতে নিরাপদে ভারতে ফিরতে পারেন, সে জন্য তারা ব্যবস্থা করবেন। বিনিময়ে তারা আপনার সাহায্যে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান।

ডা. জাকির নায়েক আরও জানান, এই প্রস্তাব শুনে তিনি প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত লোকসভা ভোটের আগে এক ভাষণে দুই মিনিটে তার নাম উল্লেখ করেছিলেন নয়বার।

তার দাবি, মোদির প্রতিনিধির সঙ্গে তিনি কয়েক ঘণ্টা কথা বলেছিলেন। তাকে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করুন।

প্রসঙ্গত মুম্বাইয়ের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা ডংগ্রিতে ১৯৬৫ সালে এক ডাক্তার পরিবারে জাকির নায়েকের জন্ম। তার বাবা ছিলেন চিকিৎসক, তার বড়ভাইও চিকিৎসক।

সেন্ট মেরিস হাইস্কুলে লেখাপড়া শেষ করে তিনি মুম্বাইয়ের টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়েন।

কিন্তু ১৯৯১ সালে ডাক্তারি পেশা ছেড়ে দিয়ে ডংগ্রিতেই তিনি গড়ে তোলেন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা।

২০১০ সালে ‘অগ্রহণযোগ্য ব্যবহার’ এবং বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার তার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

তবে তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর।

বাংলাদেশের গণমাধ্যম দাবি করেছিল যে, হামলাকারীদের একজন জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। ওই মাসেই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তার ‘পিস টিভি’র সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে।

২০১৬ সালের নভেম্বরে ভারতের কাউন্টার টেররিজম এজেন্সি ধর্মকে পূঁজি করে ঘৃণা ছড়ানো এবং অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনে। এরপর ২০১৭ মালে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যান।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *