জেনে নিন, আয়-রোজগারে বরকত লাভের উপায় !!

প্রতিটি মানুষ সচ্ছল ও জীবিকার ব্যাপারে ভাবনামুক্ত হতে চায়। আল্লাহতায়ালা মুমিনের প্রাত্যহিক জীবনাচারেরই কিছু কর্মকা-ের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য রেখেছেন। সেগুলোর সুষ্ঠু অনুসরণের ফলে জীবিকা উপার্জনে সচ্ছলতা ও বরকত লাভ সম্ভব। ৮টি উপায় এখানে আলোচনা করা হলো।

তওবা-ইস্তেগফার : আল্লাহপ্রদত্ত জীবিকা লাভের অন্যতম মাধ্যম হলো তওবা-ইস্তেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর নবী নুহ (আ.) তার জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বৃদ্ধি করে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)

আয়াতটিতে আল্লাহ পরিষ্কার বলেছেন, তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে তিনি ধনসম্পদ বাড়িয়ে দেবেন। সুতরাং জীবিকার সচ্ছলতা প্রত্যাশীদের জন্য অধিক পরিমাণে তওবা ও ইস্তেগফার করতে থাকা উচিত।

তাকওয়া ও আল্লাহভীতি : তাকওয়া ও খোদাভীতি যে জীবিকা লাভের অন্যতম একটি উপায়, এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ বের করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ২-৩)। হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) উপরোক্ত আয়াত দুটির তাফসির প্রসঙ্গে বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশাবলি পালন করে এবং তার নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে বিরত থেকে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য সব বিপদাপদ থেকে মুক্ত হওয়ার পথ করে দেবেন এবং যেখান থেকে সে রিজিক লাভ করার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করে না; সেখান থেকে তাকে রিজিক দেবেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির ৪/৪০০)

আল্লাহর ওপর ভরসা : যেসব উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে জীবিকায় সচ্ছলতা লাভ করা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো, মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার ওপর যেমন ভরসা করা উচিত তোমরা যদি তার ওপর তেমন ভরসা করো; তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক প্রদান করা হয়, অর্থাৎ সকালে তারা শূন্য উদরে বেরিয়ে যায়, আর সন্ধ্যায় পূর্ণ উদরে ফিরে আসে; তোমাদেরও ঠিক এভাবে রিজিক প্রদান করা হবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)

তবে তাওয়াক্কুল অর্থ জীবিকা লাভের জন্য চেষ্টা-পরিশ্রম ত্যাগ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকা নয়। বরং যথারীতি কর্মের পাশাপাশি ভরসা রাখতে হবে মহান আল্লাহর ওপর। আর এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, সবকিছু তার হাতেই নিয়ন্ত্রিত এবং রিজিকের ব্যবস্থা একমাত্র তিনিই করে থাকেন।

ইবাদতের জন্য ফারেগ হওয়া : ইবাদতের জন্য হৃদয়কে পরিপূর্ণ একাগ্র করার ক্ষেত্রে অধিক যতœবান হওয়ার মাধ্যমেও সচ্ছলতা লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে কুদসিতে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে বনি আদম! তুমি আমার ইবাদতের জন্য নিজেকে ফারেগ করো। (তাহলে) আমি তোমার বক্ষকে সম্পদশালী করে দেব এবং তোমার দারিদ্র্যকে দূর করে দেব। আর যদি তা না করো তাহলে তোমার হাত (অর্থহীন) কাজে ব্যস্ত করে দেব আর লোকের কাছে তোমাকে মুখাপেক্ষী করে রাখব।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬৬)

হজ ও ওমরা পালন : হজ সম্পাদনের পর ওমরার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং ওমরা শেষ হলে পুনরায় হজের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকা রিজিক লাভের উপায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘হজ ও ওমরা একের পর এক আদায় করো। কারণ, এ দুটি দারিদ্র্য ও গোনাহকে এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন হাপর (অগ্নি) লৌহ ও স্বর্ণ-রৌপ্যের ময়লা দূর করে দেয়। আর হজে মাবরুরের প্রতিদান শুধুই জান্নাত।’ (জামে তিরমিজি : ৮১০)

অতএব নিজেদের গোনাহের বোঝা এবং অভাবও দারিদ্র্য থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে সামর্থ্য অনুযায়ী নিয়মিত হজ ও ওমরা পালন করতে হবে।

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা : জীবিকায় সচ্ছলতা লাভের আরেকটি উপায় হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রিজিকের সচ্ছলতা ও দীর্ঘজীবন পছন্দ করে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৫)তাই সাধ্যমতো আত্মীয়দের উপকার করা এবং যথাসাধ্য অনিষ্ট হতে তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করা দরকার।

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা : জীবিকায় সচ্ছলতা লাভের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, তাকে পারলৌকিক প্রতিদানের পাশাপাশি দুনিয়াতেও প্রতিদান দেওয়া হবে। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেন। (সুরা সাবা, আয়াত, ৩৯)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে কুদসিতে মহানবী (সা.) বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তোমরা ব্যয় করো, আমি তোমাদের জন্য ব্যয় করব।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৯৩)আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কারীদের জন্য সচ্ছলতার চাইতে পোক্ত প্রতিশ্রুতি এবং রিজিক লাভ করার চেয়ে সহজ ও নিশ্চিত মাধ্যম আর কী হতে পারে!

দ্বীন-ধর্ম শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় করা : জীবিকায় সচ্ছলতা লাভের আরেকটি উপায় হলো দ্বীনের শিক্ষাগ্রহণকারীদের পেছনে ব্যয় করা। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.)-এর জমানার দুই ভাইয়ের ঘটনা। তাদের একজন নবী কারিম (সা.) এর খেদমতে ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করার জন্য আসত এবং অপরজন জীবিকা-অর্জনের চেষ্টায় লিপ্ত থাকত।

যে ভাই জীবিকা অর্জনের জন্য মেহনত করত, একদিন সে নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। জবাবে নবী করিম (সা.) বললেন, ‘হতে পারে তোমাকে তার অসিলাতেই রিজিক প্রদান করা হচ্ছে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৫)

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *