Islamic

জেনে নিন সুরা ইখলাসে রয়েছে যে ফজিলত ও বরকত !!

সুরা ইখলাস কোরআন মাজিদের ১১২তম সুরা। সুরাটি সুরা নাসের পরে হিজরতের আগে মক্কার প্রথম যুুগে অবতীর্ণ হয়। এই সুরার আয়াত সংখ্যা ৪, রুকু সংখ্যা ১। ইখলাস অর্থ গভীর অনুরক্তি, একনিষ্ঠতা, নিরেট বিশ্বাস, খাঁটি আনুগত্য, ভক্তিপূর্ণ উপাসনা। শিরক থেকে মুক্ত হয়ে তাওহিদ বা এক আল্লাহর ওপর খাঁটি ও নিরেট বিশ্বাসী হওয়াকে ইখলাস বলা হয়। এ সুরার মর্মার্থের ভিত্তিতে নামকরণ করা হয়েছে সুরা ইখলাস। যে ব্যক্তি এ সুরাটি পাঠ করবে ও এর মর্মার্থের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে নিশ্চিত শিরক থেকে মুক্তি লাভ করে নিরেট তাওহিদবাদী হয়ে যাবে এবং আল্লাহর মুখলিস বান্দায় পরিণত হবে।

এ সুরার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ তাআলা নিজের পরিচয় তাঁর হাবিবকে দিতে বলেছেন। বন্ধুর পরিচয় বন্ধু দেওয়ার মাধ্যমে বন্ধুর শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণিত হয়েছে। এ সুরার শানে নুজুল প্রসঙ্গে হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, খাইবারের কয়েকজন ইহুদি একদা মহানবী (সা.)-এর দরবারে এসে বলে, হে আবুল কাসেম! আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নূর থেকে, আদমকে মাটি থেকে এবং পৃথিবীকে পানির ফেনা থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখন আপনার রব সম্পর্কে আমাদের জানান, তিনি কোন বস্তুর থেকে সৃষ্ট? রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো জবাব দেননি। অতঃপর হজরত জিবরাঈল (আ.) সুরা ইখলাস নিয়ে আসেন।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, একদা নাজরানের সাতজন খ্রিস্টান পাদ্রি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলে, আমাদের বলুন, আপনার রব কেমন? তিনি কিসের তৈরি? মহানবী (সা.) বলেন, আমার রব কোনো জিনিসের তৈরি নয়। তিনি সব বস্তু থেকে আলাদা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত সুরা নাজিল করেন।

বিষয়বস্তু : সুরা ইখলাসের চারটি আয়াতে চারটি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ একক ও অনন্য। দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি অমুখাপেক্ষী। তৃতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, জন্মের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই এবং চতুর্থ আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি অতুলনীয়। চারটি আয়াতের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।

সুরা ইখলাসের বৈশিষ্ট্য

সুরা ইখলাস এমন একটি সুরা যার মধ্যে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের বিষয়টি সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা অন্য কোনো সুরায় বর্ণনা করা হয়নি। মক্কার কাফিরদের কাছে স্রষ্টা এক হওয়া আশ্চর্যের বিষয় ছিল এবং তাদের জানার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল স্রষ্টা কেমন এবং কিসের তৈরি। আল্লাহ তাআলা জোরালো ভাষায় এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এ সুরায়। এ সুরার অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—

কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য :

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে রাতে বারবার সুরা আল-ইখলাস পড়তে শুনেছেন। অতঃপর সকালে মহানবী (সা.)-কে এ বিষয়টি অবহিত করা হলো। মহানবী (সা.) তখন বলেন, ওই সত্তার শপথ, যার কুদরতের হাতে আমার জীবন, অবশ্যই এ সুরা কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি : ৫০১৩, আবু দাউদ : ১৪৬১, নাসায়ি : ২/১৭১, মুআত্তা মালেক : ১/২০৮)

মহানবী (সা.) একদা সাহাবিদের বলেন, তোমারা কি এক রাতে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে? সাহাবিরা এ প্রস্তাবকে খুবই কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বলল, আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে? মহানবী (সা.) তখন বললেন, সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০১৫, নাসায়ি, হাদিস : ৯৯৫)

সুরা ইখলাসকে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ বলার কারণ :

কোরআন মাজিদ তিন ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ আহকাম বা বিধি-বিধানসংক্রান্ত। আরেক ভাগ জান্নাতের সুসংবাদ ও জাহান্নামের দুঃসংবাদসংক্রান্ত এবং অন্য ভাগ আল্লাহর নাম ও গুণাবলিসংক্রান্ত। শেষোক্ত ভাগটি সুরা ইখলাসে একত্রিত হওয়ার কারণে একে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ বলা হয়েছে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ কোরআনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। আর এ সুরাটি (সুরা ইখলাস)-কে একটি ভাগে পরিণত করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৮১২, তিরমিজি, হাদিস : ২৯০০)

সুরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে কি এক খতম কোরআন পাঠের সওয়াব পাওয়া যাবে?

এ সুরাটি তিনবার পাঠ করলেই পূর্ণ কোরআন মাজিদ পাঠ হয়ে যাবে বা এক খতম কোরআনের সওয়াবপ্রাপ্ত হবে—এরূপ কথা হাদিসের কোথাও বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে যে সুরা ইলখাস কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য। এর মর্মার্থ হলো, এ সুরাটি যে ব্যক্তি বুঝে পাঠ করবে তার অন্তরে আল্লাহর নাম ও গুণাবলি গেঁথে যাবে, ফলে সে শিরকি চিন্তাধারা থেকে পরিচ্ছন্ন থাকবে। অর্থাৎ সুরা ইখলাস পাঠের ফলে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের আমল তার মধ্যে পাওয়া গেল। এর অর্থ এই নয় যে একবার সুরা পাঠ করলে এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করা হলো এবং তিনবার পাঠ করলে এক খতম কোরআন পাঠ করা হলো এবং এক খতমের সওয়াবপ্রাপ্ত হবে।

সুরা ইখলাসকে ভালোবাসলে আল্লাহও ভালোবাসেন

মহানবী (সা.) একজন সাহাবির নেতৃত্বে একদল সৈনিককে যুদ্ধে প্রেরণ করেন। তিনি যুদ্ধের দীর্ঘ সময়ে শুধু সুরা ইখলাস দ্বারা নামাজ পড়িয়েছেন। সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে মহানবী (সা.)-কে তা অবহিত করেন। মহানবী (সা.) তাদের বলেন, তোমরা তাকে জিজ্ঞেস করো কেন সে এরূপ করেছে। সেনাপতি বললেন, এ সুরায় আল্লাহর গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে বিধায় আমি এ সুরাকে ভালোবাসি। মহানবী (সা.) সাহাবিদের বলেন, তোমরা তাকে গিয়ে বলো, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। (সহিহ বুখারি হাদিস নং ৭৩৭৫, মুসলিম হাদিস নং ৮১৩, নাসায়ি ২/১৭০)

জান্নাত লাভ : জনৈক সাহাবি মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বলেন, এ ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৭৪, তিরমিজি, হাদিস : ২৯০১)

গুনাহ মাফ : মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, তবে ঋণ থাকলে তা মাফ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯৮)

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button