জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে আমার বুক, স্পর্শকাতর অঙ্গ পুড়িয়ে দিয়েছে ওরা !!

বিয়ের সাত মাস পর সুন্দর জীবনের আশায় গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরব যান মৌলভীবাজারের এক তরুণী (২০)। স্থানীয় এক দালালের দেখানো রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে স্বামীকে রেখে এ পথ বেছে নেন তিনি। কিন্তু সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় যখন তিনি সৌদিতে পৌঁছান।

এদিকে গত ২৮ এপ্রিল সৌদি আরবের দাম্মাম বিমানবন্দরে নেমেই ওই তরুণী জানতে পারেন তাকে যৌ’নকর্মী হিসেবে চার লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এরপর সেখান থেকে মালিকের বাড়িতে যাওয়ার পর পরই শুরু হয় নির্যাতন। প্রতিনিয়ত ধ’র্ষণ, মারধর আর অনাহারে একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন ঘটনার এক পর্যায়ে সৌদি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন ওই তরুণী। দেশে ফেরার দুদিন পর শ্রীমঙ্গলের ‘মুক্তি মেডিকেয়ার’ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেই এমন নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন ওই তরুণী। মুক্তি মেডিকেয়ারে চিকিৎসাধীন ওই তরুণীর সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের কথা হলে সৌদি আরবে নির্যাতনের ভয়ংকার বিবরণ দেন তিনি।

তার ভাষায়, যৌ’নকর্মে রাজি না হলে তার ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। একটি অফিসে রেখে প্রতিদিন কয়েকজন পালাক্রমে তাকে ধ’র্ষণ করতেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে আমার বুক, স্পর্শকাতর জায়গা ওরা পুড়িয়ে দিয়েছে। তার দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হাত-পা ও উরুতে জখম করে দিয়েছে। দলবেঁধে ৪/৫ জন মিলে ধ’র্ষণ করত, তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলতাম।’

জানা যায়, ২০ বছর বয়সী ওই তরুণীর বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯ নম্বর ইসলামপুর ইউনিয়নে। বর্তমানে অর্থের অভাবে চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই গতকাল রবিবার তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ব্যাপারে ‘মুক্তি মেডিকেয়ার’ হাসপাতালের প্রধান সেবিকা দীপ্তি দত্ত সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়েটার যৌ’নাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ক্ষতগুলো সারতে সময় লাগবে।’

এদিকে মানসিকভাবে ওই তরুণীর অসুস্থতার কথা জানিয়ে হাসপাতলের চিকিৎসক সাধন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘মাঝে মাঝে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আবল-তাবল বকছে। দ্রুত তাকে মানসিক চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে ওই তরুণীর মা বলেন, ‘আমার ভালো মেয়ে বিদেশ থেকে এসেছে আধমরা হয়ে। টাকা রোজগারের আশায় গেল, একটি টাকাও ওকে দেওয়া হয়নি।’

এদিকে দেশে থাকা ওই তরুণীর স্বামী নির্যাতনের কথা ‘আদম ব্যাপারী’ মোস্তফাকে জানালে তিনি ‘মিথ্যা কথা’ বলে উড়িয়ে দেন। তরুণীর স্বামী পুলিশ ও সাংবাদিকের ভয় দেখালে তিনি দাবি করেন, যে বাড়িতে কাজ পেয়েছিলেন, সেখান থেকে দুই হাজার ২০০ রিয়াল নিয়ে পালিয়ে গেছেন ওই তরুণী।

তবে শেষ পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের শরণাপন্ন হন ওই তরুণীর স্বামী। প্রশাসনের তৎপরতায় ছয় মাস ২৬ দিন পর বাংলাদেশ সরকার, দূতাবাস ও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহায়তায় দেশে ফেরেন তার স্ত্রী।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *