ডেক্সামিথাসোন ওষুধের উৎপাদন বাড়াতে বলল ডব্লিউএইচও !!
ব্রিটিশ সরকার অনুমোদন দিয়েছিল আগেই; এবার নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ডেক্সামিথাসোন প্রয়োগ করতে বলল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। অক্সফোর্ডের রিকভারি ট্রায়ালের প্রতিবেদন বলছে, ডেক্সামিথাসোনের থেরাপিতে সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমেছে। বিশ্বজুড়েই এ ওষুধের উৎপাদন আরো বাড়ানো উচিত বলে গতকাল সোমবার জেনেভার কনফারেন্সে জানান ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান জানান, ডেক্সামিথাসোন ওষুধ দামেও সস্তা ও সহজলভ্য। করোনার চিকিৎসায় এ ওষুধ কার্যকরী প্রমাণিত হবে বলেই আশা করা যাচ্ছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ডেক্সামিথাসোন ওষুধ ব্যবহার করার জন্য ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে অনুমতি দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ওষুধের গুণাগুণ বহুবার পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। সংকটাপন্ন কোভিড-১৯ রোগী, যাদের ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন, তাদের ওপরই প্রয়োগ করা হবে এ ওষুধ। সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, ডেক্সামিথাসোন ওষুধ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এর কার্যকারিতা আগেই প্রমাণিত। রোগীদের জন্যও এ ওষুধ নিরাপদ। সার্বিকভাবে এর প্রয়োগ হলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচানো যাবে।১৯৭৭ সাল থেকে ডেক্সামিথাসোনকে জরুরি ওষুধের তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আর্থ্রাইটিস থেকে সোরিয়াসিস, ক্যানসারসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের চিকিৎসাতেও এ ওষুধ ব্যবহার করা হয়। করোনার চিকিৎসায় প্রথমবার এ ওষুধ প্রয়োগ করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
এগারো দিনের রিকভারি ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে এনে তাঁরা জানান, অন্তত ২০০০ করোনা রোগীকে এ ওষুধ দিয়ে দেখা গেছে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থাকা ৩৫ শতাংশ রোগী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে। অক্সিজেন সাপোর্টে থাকা ২০ শতাংশ করোনা রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম কমে গিয়ে সেরে ওঠার পথেই অনেকেই। এ ট্রায়ালের রিপোর্ট দেখেই ডেক্সামিথাসোনকে ‘জীবন রক্ষাকারী’ ওষুধ হিসেবে ঘোষণা করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম বলেন, ‘ডেক্সামিথাসোন ওষুধের কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ওষুধের ডোজের কারণে ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। তাই ডেক্সামিথাসোন করোনা রোগীদের জন্য নিরাপদ।’এর আগে করোনার চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলে দাবি করা হলেও দেখা যায়, ওষুধটির ডোজের হেরফেরে ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। হার্ট এরিদমিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন করোনা রোগী। বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি। করোনার সলিডারিটি ট্রায়াল থেকে এখন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেদিক থেকে কর্টিকোস্টেরয়েড ডেক্সামিথাসোন করোনা থেরাপিতে কার্যকর হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
করোনায় রোগীদের শরীরে যে তীব্র প্রদাহজনিত রোগ বা ইনফ্ল্যামেশন তৈরি হয়, তা কমাতে পারে ডেক্সামিথাসোন। গবেষকরা বলেছেন, সাইটোকাইন স্টর্ম রুখে দিতে পারে এই স্টেরয়েড। সাইটোকাইন প্রোটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এলেই শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে। তীব্র শ্বাসজনিত সমস্যা তথা অ্যাকিউট রেসপিরেটারি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম কমতে থাকে। ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বা কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার দরকার পড়ে না। ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে রোগী।