‘ঢাকা টু দুবাই ডান্স বারে যেভাবে হচ্ছে রমরমা দেহ ব্যবসা’ !!

ঢাকা থেকে দুবাই ডান্স বারে ডান্সের আড়ালে চলছে দেহ ব্যবসা। এমনি এক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন জেসমিন আক্তার (ছদ্মনাম) নামে একটি মেয়ে। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে ডান্স করতেন জেসমিন।

কয়েক বছর আগে এক অনুষ্ঠানে নাচতে গেলে তার সঙ্গে দেখা হয় এক ব্যক্তির, যিনি দুবাইয়ের একটি ‘ডান্স বারের এজেন্ট’। দুবাইয়ে স্টেজে নাচলে ভালো টাকা পাওয়া যায় এমন কথা বলায় রাজি হয়ে যায় জেসমিন।দুবাই যেতে জেসমিনের কোন টাকা খরচ হয়নি। কিন্তু এ বিষয়টিও তার মনে কোন সন্দেহও জাগায়নি। দুবাই গিয়ে পুরোপুরি ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হন জেসমিন।

তার বর্ণনায়, ‘এখান থেকে ডান্স এর কথা বইলা নিয়া যাইতো। পরে ঐখানে ছেলেদের রুমে পাঠানো হয়। ওখানে পরিস্থিতির শিকার।”জেসমিনের মতো বহু মেয়েকে এভাবেই দুবাইয়ের ডান্স বারে চাকরি দেয়ার নামে জোর করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছে।’যেভাবে দুবাইতে পাচার করা হচ্ছে মেয়েদের: নয় মাস আগে দুবাই ফেরত কিছু নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে নারায়নগঞ্জের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন।

নারায়ণগঞ্জে র‍্যাব ১১’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই আমরা খবর পাচ্ছিলাম যে এখান থেকে কিছু মেয়ে দুবাই আসা যাওয়া করছে। আমাদের কাছে কিছু অভিযোগও এসেছে।’নয় মাস তদন্তের পর র‍্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল গত রবিবার ছয়জনকে আটক করেছে,যারা দুবাইয়ের ‘ডান্স বারে’ নারী পাচারের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।এই ছয়জনের মধ্যে একজন পাসপোর্টের দালাল, দুইজন ডান্স বারের এজেন্ট এবং দুই জন ডান্স বারের মালিক।তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে র‍্যাব জানতে পেরেছে, পাঁচটি ধাপে দুবাইয়ের ডান্স বারে নারীদের পাচার করা হয়।

প্রথম ধাপে রয়েছে এজেন্ট। তাদের কাজ হচ্ছে মেয়েদের টার্গেট করা এবং তাদেরকে প্রলোভন দেখানো। এর সাথে দুবাই ফেরত কিছু নারীও জড়িত রয়েছে। কারণ তাদের মুখে ‘আর্থিক সমৃদ্ধির গল্প’ অন্য নারীদের প্রলুব্ধ করে।

দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে পাসপোর্ট করিয়ে দেবার দালালচক্র। মেয়েদের রাজী করানো সম্ভব হলে দালালরা তাদের পাসপোর্ট পেতে সহায়তা করে। মেয়েদের ছবি পাঠানো হয় দুবাইতে ডান্স বারের মালিকদের কাছে। র‍্যাব বলছে ছবি দেখে পছন্দ হলে মালিকরা ঢাকায় আসে তাদের দেখার জন্য।

তৃতীয় ধাপে রয়েছে ট্রাভেল এজেন্ট। তাদের কাছে টুরিস্ট ভিসা পাঠিয়ে দেয় দুবাইয়ের ডান্স বারের মালিকরা।পরবর্তী ধাপে আছে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে কর্মরত কিছু অসাধু ব্যক্তি। একজন নারী ইমিগ্রেশন পেরিয়ে দুবাই যাবার জন্য ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।

র‍্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনের ভাষ্য মতে, একজনকে পাঠাতে দুই লক্ষ টাকার বেশি খরচ হয়, যার পুরোটাই বহন করে ডান্স বারের মালিকরা।দুবাইতে পৌঁছানোর পর একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় এসব নারীদের। তারপর সেখান থেকে কোন বাড়িতে নিয়ে কার্যত বন্দী করা হয় এবং দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়।

তিনি বলেন, তদন্তে দেখা গেছে একটি ট্রাভেল এজেন্সি শুধু চলতি বছরেই ৭২০ জন তরুণীকে দুবাই এবং মালয়েশিয়া পাঠিয়েছে। এ বিষয়টি র‍্যাব-এর কাছে বেশ অস্বাভাবিক মনে হয়েছে।গ্রেফতারকৃত ডান্স বারের মালিক এবং এজেন্টদের কাছ থেকে র‍্যাব জানতে পেরেছে যে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই হাজার নারীকে ডান্স বারের নামে দুবাই পাচার করা হয়।

‘একটা মেয়েকে দুবাই নিয়ে যেতে ডান্স বারের মালিকের খরচ হয় দুই লাখ টাকা। অথচ এদের একজনকে দিয়ে ডান্স বারের মালিকরা প্রতিমাসে ৬ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আয় করে,” বলছিলেন র‍্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন।

আটককৃত ডান্স বারের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানতে পেরেছে, দুবাইতে বাংলাদেশীদের মালিকানাধীন প্রায় ৪০টি ডান্স বার রয়েছে।র‍্যাব বলছে বাংলাদেশ থেকে নারীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে দুবাইতে পাচার করার রমরমা বাণিজ্য চলছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *