দরিদ্র হিন্দু মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন করে দিলেন মসজিদ কমিটি !!

সম্প্রতি ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে উত্তাল। এই আইন মুসলিমবিরোধী বলে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে কেরালা রাজ্য। সিএএ-বিরোধী প্রস্তাব পাশ হয়েছে কেরালা বিধানসভায়। সেই রাজ্যের সম্প্রীতির নজির তুলে ধরার সুযোগ ছাড়তে চাননি মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সাম্প্রদায়িক অশান্তির মরুভূমিতে এ যেন সম্প্রীতির একটুকরো মরূদ্যান। গোলাপি-সোনালি শাড়িতে লজ্জাবনত নববধূ, বরের পরনেও দক্ষিণী ঐতিহ্যবাহী সাদা শার্ট আর মুন্ড। সামনে সাজানো বিয়ের উপাচার।

জানা যায়, হিন্দু বিয়ের প্রতিটি আচার মেনে চার হাত এক হল অঞ্জু-শরতের। আর তার সাক্ষী থাকতে কেরালার চেরুভাল্লি মুসলিম জামাত মসজিদ চত্বরে ভিড় জমালেন নানা ধর্মের, নানা শ্রেণির মানুষ।সাম্প্রদায়িক অশান্তির প্রেক্ষাপটে কেরালার মসজিদে হিন্দু দম্পতির বিয়ে সৃষ্টি করল এক অনন্য নজির। যে বিয়ের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী টুইট করলেন, ‘এটাই কেরালার একতার চিত্র।’

এদিকে দু’বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে অকূলপাথারে পড়েছিলেন বিন্দু। তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে কোনোক্রমে দিন গুজরান হচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু মেয়ে অঞ্জুর বিয়ে দেওয়ার মতো টাকার ব্যবস্থা করে উঠতে পারছিলেন না। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন প্রতিবেশী নিজামউদ্দিন আলুমুত্তিল। তিনিই বিন্দুকে জামাত কমিটিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

তবে মসজিদ কর্তৃপক্ষ কি হিন্দু মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করতে রাজি হবেন? মনে এই দ্বিধা নিয়েই জামাত কমিটির দ্বারস্থ হন বিন্দু। কিন্তু সেখানে মেলে অভাবনীয় প্রতিক্রিয়া। জামাতের একজন সদস্য বিয়ের খরচের দায়িত্ব নেন।

কিন্তু অভ্যাগতদের তো খালি মুখে ফেরানো যায় না, তাই শুরু হয় প্রীতিভোজের ব্যবস্থাপনা। জুম্মাবারের নামাজে যোগ দিতে আসা মুসলিমদের জানানো হয় বিয়ের বিষয়টি। আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে রাজি হন অনেকেই। আর তাতেই মুশকিল আসান হয়।

গত রবিবার চেরুভাল্লির মুসলিম জামাত মসজিদ যেন এক অস্থায়ী বিয়েবাড়ি। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মসজিদ চত্বরেই টাঙানো হয়েছিল চাঁদোয়া। তার নীচে মালা বদল থেকে শুরু করে সব হিন্দু আচার-আচরণ মেনে বিয়ের অনুষ্ঠান চলে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা অবধি। আর তারপর প্রীতিভোজ। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে হাজার খানেক আমন্ত্রিত দক্ষিণী নিরামিষ পদ খান তৃপ্তিভরে, দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেন নবদম্পতিকে। মসজিদ কমিটির এই সাহায্যে অভিভূত নবদম্পতি।এদিকে শুধু বিয়ের আয়োজন করা নয়, নববধূকে ১০টি স্বর্ণমুদ্রা এবং দু’লক্ষ টাকাও উপহার দিয়েছে মসজিদ কমিটি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *