দলে দলে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ – বাসায় বাসায় টু-লেট !!
করোনা পরিস্থিতিকালীন এই সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, বেশিরভাগ বাসা-বাড়িতেই দুই একটা করে ফ্ল্যাট ফাঁকা আছে। ভাড়াটিয়া চেয়ে টু-লেট টাঙানো থাকলেও বাসা মালিকরা ভাড়াটিয়া খুঁজে পাচ্ছে না। আবার অনেক ভাড়াটিয়ারাও বাসা ছেড়ে দিতে চায় বলে বাড়ি মালিককে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় রাজধানীর বাসায় বাসায় ঝুলছে ‘টু-লেট’। অথচ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪শ’ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২শ’ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ।
অন্য এক জরিপ থেকে জানা যায়, ২৭ ভাগ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ ভাগ ভাড়াটিয়া প্রায় অর্ধেক, ১২ ভাগ আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাড়ি ভাড়া খাতে। এছাড়া ৪ ভাগ ভাড়াটিয়া এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বেশিরভাগ বাসায় টু-লেট টাঙানো কেন? এমন প্রশ্ন নিয়ে রাজধানীর বেশ কিছু বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের কারণে অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। পরিবারের উপার্জনের ব্যক্তিটি পরে বাসাটি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন মেস বা ছোট বাসায় উঠেছে, যে কারণে অনেক বাসা ফাঁকা হয়েছে। এছাড়া এই পরিস্থিতিতে নতুন কেউ বাসা পরিবর্তন করেনি এবং জীবিকার তাগিদে ঢাকায় নতুন মানুষও তেমন একটা আসেনি। আরও অনেক কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ একটি, অনেকে চাকরি হারিয়েছে, বা বেতন ঠিকমত পাচ্ছে না।
রাজধানীর শনিরআখরা এলাকার এক বাসা মালিক হাবিবুর রহমান খান জানান, গত ২ মাস থেকে আমার ৬তলা বাসার ৩টি ফ্লাট ফাকা ভাড়াটিয়া পাচ্ছি না। কেন রাজধানীর প্রায় বাসাগুলোতে টু-লেট ঝুলছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকার বসবাসকারীদের মধ্যে অনেকেই নিজ গ্রামে চলে গেছে। পরিবারকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে কোন মেসে উঠেছে। অনেকের ইনকাম কমে গেছে, যে কারণে আগে ১৬ হাজার টাকার বাড়িতে থাকলেও এখন, ১০ হাজার টাকা ভাড়ার বাসায় চলে যেতে চাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তেমন ব্যবসা না থাকায় পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। অনেকের ইনকাম না থাকায় ২ মাস ধরে বাসা ভাড়া দিতে পারেনি, যে কারণে বাসা মালিকরা রাগে তাদের বের হয়ে যেতে বলে টু-লেট টাঙিয়েছে। সব মিলিয়েই এখন রাজধানীর অনেক বাসাতেই দুই-একটি ফ্লাট ফাঁকা রয়েছে, আর বাসা মালিকরা টু-লেট টাঙিয়েও আশানুরূপ ভাড়াটিয়া পাচ্ছে না।’ রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন আনিছুর রহমান। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনিও বাসার মালিককে জানিয়ে দিয়েছেন আগামী মাস থেকে তিনি বাসা ছেড়ে দেবেন। সে অনুযায়ী বাসার মালিকও বাসার মূল গেটে টু-লেট টাঙিয়েছেন।
কেন বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন এই বিষয়ে আনিছুর রহমান বলেন, ‘সীমিত বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি।যেখানে বেতনের সিংহভাগই চলে যায় বাসা ভাড়াতে। স্ত্রী আর এক সন্তান নিয়ে ওই বাসায় থাকতাম। কিন্তু বিগত দুই মাস ধরে অর্ধেক বেতন পাচ্ছি। বাসা ভাড়া দেয়া এবং সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাসা ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে আমি একটি মেসে উঠবো। আমার মত এই সমস্যায় রয়েছেন ঢাকার অনেক নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের মানুষের। তাই হয়তবা অনেকেই বাসা ছেড়ে দিচ্ছে। যে কারনে রাজধানীর অনেক বাসাতেই এখন টু লেট টাঙানো দেখা যাচ্ছে।’