দাসত্বের চেয়েও খারাপ সৌদি আরবে কা’ফালা !!

সৌদি আরবের বহুল পঠিত দুটি সংবাদপত্র আরব নিউজ এবং সৌদি গেজেটের সাবেক সম্পাদক, বর্তমানে সৌদি গেজেটের এডিটর-এট-লার্জ খালেদ আলমাঈনা সৌদি আরবে বসবাসরত প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন। সেখানে প্রবাসী শ্রমিকদের নানারকম বঞ্চনার কথা উঠে এসেছে।

এসব বঞ্চনা থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ষা করতে কা’ফালা পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন তিনি। প্রবাস কথার পাঠকদের জন্য তার লেখাটি হুবহু অনুবাদ করা হলো।

আমি কাতারের শ্রম আইন এবং কা’ফালা পদ্ধতির পরিবর্তন বিষয়ে পড়ছিলাম। এই কা’ফালা পদ্ধতির সাথে আমি গত ২৮ বছর ধরে জড়িত। ভুল বুঝবেন না- আমি শ্রম মন্ত্রণালয়ে কাজ করি না অথবা আমার কোন রিক্রুটিং কোম্পানীও নেই। আমি আসলে ২৫ বছর আরব নিউজ এর সম্পাদক ছিলাম এবং ২ বছর সৌদি গেজেটের সম্পাদক ছিলাম। দুটিই ইংরেজি ভাষায় সৌদি সংবাদপত্র।

সংবাদপত্র দুটি সৌদি নাগরিক এবং প্রবাসীদের চোখ ও কানের কাজ করেছে। তাদের কাছে আমরা ছিলাম হেল্পলাইনের মতো। তারা আমাদের কাছে পরামর্শ, সহযোগিতা, তথ্য এবং সমর্থনের জন্য লিখতো। তাদের বেশিরভাগ লেখাই ছিল কর্মপরিবেশ, চুক্তি ভঙ্গ, চাকরি থেকে ছাটাই এবং অন্যান্য সমস্যা নিয়ে। একেবারে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানী থেকে শুরু করে নিচের দিকের কোম্পানীগুলোও ছিল এসব অনিয়মের তালিকায়।

কিছু কিছু কোম্পানী আছে যাদের খুব সুনাম আছে। কিন্তু অন্ধকার দিক হলো তাদের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা। আইনগত সহযোগিতার কোন বিষয় সেখানে ছিল না। তাই প্রবাসীরা আমাদের কাছে লিখতো। বেশিরভাগ সময় তারা কা’ফালা পদ্ধতির পরিবর্তনের উপর জোর দিতো। একজন এশিয়ান শ্রমিক একবার লিখলেন-

টা দাসত্বের চেয়েও খারাপ। কফিলের কাছে জি’ম্মি আমরা। তার ইচ্ছে ছাড়া আমরা নড়াচড়া করতে পারি না, কোথাও যেতে পারি না, এমনকি কোনকিছু করতেও পারি না। আমরা তার ঘন ঘন বদলানো আরেকজন লিখেছিলেন- মেজাজের উপর নির্ভরশীল।কিছু কিছু ক্ষেত্রে কফিল আমাদের অন্য জায়গায় কাজ করতে নিয়ে যায় এবং আমাদের প্রতিবাদ করার কোন সাহস নেই।

গৃহকর্মীরা লিখতেন-ছুটির দিনে আমাদেরকে মালিকের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় সারা দিন কাজ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এবং আমাদের উপর কড়া নজর রাখা হয়।

এসব চিঠিপত্রে আমার পোস্টবক্স ভরে যেতো এবং দুটি খবরের কাগজে কাজ করার সময় এসব মেইল আমার ই-মেইল একাউন্ট উপচে পড়তো। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে, কোন মানুষেরই অন্য মানুষের মালিক হওয়ার কোন অধিকার নেই। কা’ফালা একটা দাসত্বের পদ্ধতি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় তখন যখন কোন কফিলের মৃত্যু হয় এবং শ্রমিকের মালিকানা চলে যায় ঐ কফিলের পরিবারের সদস্যদের কাছে। নতুন কফিল আগের জনের মতো দয়ালু এবং যত্নবান নাও হতে পারে।

শ্রমিকদের উপর কফিলদের আরেক বিশেষ ধরণের শোষণের নাম হুরুপ। অর্থাৎ কোন শ্রমিকের নামে পুলিমের কাছে অ’ভিযোগ করে দেয়া। কফিলরা শ্রমিকদের কাজের মেয়াদের শেষে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং দেশে ফেলার বিমানভাড়া না দেয়ার জন্য এই কাজ করে থাকে। আমি একটা ঘটনার কথা জানি যেখানে, দীর্ঘদিনের প্রবাসী একজনকে আল-সুমাইছি নির্বাসন কেন্দ্রে থাকতে হচ্ছে।

কারণ কফিল তার বি’রুদ্ধে হুরুপ বা অ’ভিযোগ করেছিল। ৪৫ দিন ধরে সে ওখানে আছে। ঐ প্রবাসী একজন ডায়াবেটিক রোগী, সব সময় তার ওষুধ খেতে হয় এবং সে খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আমি তাকে বের করে আনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করছি। কয়েকটি চিঠি লিখেছি, ফোন করেছি, এমনকি তার কফিলের সাথে দেখাও করতে চেয়েছি। কিন্তু কোন ফল হচ্ছে না। চিন্তা করতে পারেন, সৌদি আরবে ৩৫ বছর থাকার পর তাকে এখন নির্বাসন কেন্দ্রে থাকতে হচ্ছে!

প্রবাসী শ্রমিকরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে জন্য শ্রমমন্ত্রী অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তাও অনেক সহানুভুতিশীল। অসহায় মানুষদের সহযোগিতার জন্য তারা সর্বোচ্চটুকু করছেন। আরো অনেক কিছু করতে হবে এবং সবচেয়ে জরুরী হলো কা’ফালা পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়ন এবং পরিবর্তন করা। একজন প্রবাসী বলেছেন-

সরকারেরই আমাদের কফিল হওয়া উচিত এবং জোর করে কফিল আমাদের কাছ থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ টাকা নেয়, সরকারকে আমরা তার চেয়েও বেশি দিতে রাজি আছি। আর আল-সুমাইছি নির্বাসন কেন্দ্রে যে একজন প্রবাসী ডায়াবেটিক রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন, তাকে কে সহযোগিতা করবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *