দুই দিন খুঁজে ব্যাগ ভর্তি টাকা ও ল্যাপটপ ফিরিয়ে দিলেন সিএনজিচালক !!

এ যুগে সবচেয়ে বড় যে জিনিসটার অভাব তা হচ্ছে বিশ্বস্ততা। হাদীস শরীফে এসেছে, এমন এক সময় আসবে যখন কয়েক গ্রাম মিলেও একজন বিশ্বস্ত মানুষ খুঁজে পাওয়া ‍দুস্কর হয়ে যাবে। বিশ্বস্ততার এ আকালের যুগে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সুরুজ আলী, তাও আবার রাজধানী ঢাকায়।

প্রতিদিনের নিয়মে ঢাকার রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন সুরুজ আলী (৫১)। মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে নামিয়ে দেন পল্লবীর রূপনগরে। তারপর যাত্রী নিয়ে যান কাকরাইলের হেয়ার রোডে। তারপর গুলশানে। সবকিছু স্বাভাবিকই ছিলো। সমস্যা বাঁধলো একটি ব্যাগ নিয়ে।গুলশানের যাত্রী নিজের ব্যাগ-পত্র নামানোর সময় দেখেন সিএনজির পেছনে একটি ব্যাগ পড়ে আছে। যা তার নয়। চালক সুরুজ আলীও জানেন না, সেটি কার। কে ফেলে গেছেন?

সুরুজ আলী ভাবলেন- একটু আগেই হেয়ার রোডে বিচারপতি বাসভবনের সামনে যাত্রী নামিয়ে এসেছেন। তিনিই সম্ভবত ব্যাগটি ফেলে গেছেন। খোঁজ নিতে সেখানে গেলেন সুরুজ আলী। বিচারপতি বাসভবনের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের খুলে বললেন ঘটনাটি। তারা বললেন- ব্যাগটি যারই হোক, রেখে যান, কেউ খুঁজতে এলে দিয়ে দিবো।পুলিশের কথা মনঃপুত হয়নি সুরুজ আলীর। মনে মনে ভাবলেন, এ শহরে বিশ্বাস ও ভরসা করার মানুষ কই? অগত্যা নিজেই খুঁজতে বেরিয়ে গেলেন ব্যাগের মালিককে। কিন্তু, ততক্ষণে রাত বেড়ে গেছে অনেক।

তখন পর্যন্ত ব্যাগটি একটিবারের জন্যও খুলে দেখেননি সুরুজ আলী। নিজের বাসাতেও নিয়ে যাননি। চটের বস্তায় মুড়িয়ে সেটিকে সিএনজির সিটের নিচে লুকিয়ে রাখলেন। পরদিন ভোরে আবার বের হলেন ব্যাগ হারানো ব্যক্তির খোঁজে। তবে এবার খুললেন সে ব্যাগ। দেখলেন তাতে রয়েছে একটি নোটপ্যাড, নগদ টাকা, জমি সংক্রান্ত ও অফিসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র।

সেসব কাগজের একটি পড়ে সুরুজ আলী দেখলেন, তাতে একেএম শামসুজ্জামান নামের এক ব্যক্তির স্বাক্ষর রয়েছে। আর রয়েছে সম্প্রসারিত রূপনগর আবাসিক এলাকার ঠিকানা। পরক্ষণেই মনে পড়লো, গতকাল তো সেখানেই দুই ব্যক্তিকে নামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

যেই ভাবা সেই কাজ। সোজা রূপনগরে চলে গেলেন সুরুজ আলী। দুপুরে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে কর্মরত নিরাপত্তারক্ষীদের জানালেন ঘটনাটি। তারাও ব্যাগ হারানোর ঘটনার ব্যাপারে অবগত ছিলেন।

আর তখনও নিজের কাজে সেখানেই অবস্থান করছিলেন ব্যাগের মালিক একেএম শামসুজ্জামান। অবশেষে সুরুজ আলী তার সাক্ষাত পেলেন। হারানো জিনিসপত্র ঠিকঠাক ফিরিয়ে দিলেন মালিককে।
“যার হারায়, সে বুঝে। তাই মনে করলাম, ব্যাগটা ফিরায়ে দেওয়া দরকার। এ আর এমন কী!”- সুরুজ আলী

একজন সিএনজি-চালকের সততার এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখে হতবাক হয়ে যান বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক একেএম শামসুজ্জামান। সঙ্গে সঙ্গে সুরুজকে নিয়ে যান নিজের বাসায়। পরিবারের সদস্যদের কাছে সুরুজ সম্পর্কে বললেন- “দেখো, এ শহরে এখনও এমন মানুষ আছেন!”

সুরুজ আলীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে পুরস্কৃত করেছেন একেএম শামসুজ্জামান। সুরুজের প্রতি তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *