নতুন নিয়মে ৪ শহরে হতে পারে ‘লকডাউন’ !!

দেশ সর্বোচ্চ করোনাঝুঁকির দিকে এগোতে থাকায় এবং বড় শহরগুলোতে আ’ক্রান্তের হার বেশি হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছে সরকার। এই শহরগুলোতে নতুন নিয়মে ‘লকডাউনের’ বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। নগরীর মেয়ররা চাচ্ছেন, এই চার সিটিতে যাতে অন্য জেলার মানুষ আসা-যাওয়া করতে না পারে তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি সিটি এলাকায় আলাদাভাবে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে। ফলাফল দেখে ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় সিটিগুলোতে ওয়ার্ডভিত্তিক রেড ইয়েলো গ্রিন জোন করা হতে পারে। সোমবার তিন মন্ত্রী, চার মেয়রসহ সরকারের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সচিবের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিশেষ একটি বৈঠকে এ আলোচনা হয়। আগামী দুই দিনের মধ্যে এ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় একটি জাতীয় দৈনিকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদসচিব জরুরি ভিত্তিতে ওই বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী এতে অংশ নেন। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদসচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা, আইজিপি এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পর লকডাউন খুলে দেওয়ার পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে সরকার স্বস্তিতে নেই। সবচেয়ে বেশি করোনায় আ’ক্রান্ত এলাকা ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ নিয়ে কী করা যায় তা নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে মেয়রদের বলা হয়েছে, বৈঠকের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করে সুপারিশমালা তৈরি করবে। কমিটির সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদন পেলে দু-তিন দিনের মধ্যে তাদের জানানো হবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন সর্বোচ্চ ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। এই সময়ে করোনাভা’ইরাস সম্পর্কিত আন্তর্জাতিকভাবে যেসব নিয়ম-কানুন দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই পালন করার বিকল্প নেই। সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরের দুজন মেয়র ঈদের আগে গার্মেন্ট কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না বলে মত প্রকাশ করেন। ঈদের আগে গার্মেন্ট না খুলে দিয়ে ঈদের পর অন্তত ১০-১৫ দিন পর্যন্ত টানা ছুটি বৃদ্ধি করলে দেশ উচ্চ ঝুঁকির দিকে যেত না বলে তাঁরা বলেন। তাঁরা আরো বলেছেন, সরকার সব কিছুই করছে, কিন্তু এই বৈঠকটি যদি ছুটি বাতিলের আগে মেয়রদের নিয়ে করা হতো তাহলে ভালো হতো।

ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কয়েক কোটি মানুষের বাস। এই শহরগুলোতে আন্ত জেলার পরিবহন বন্ধ না করে সংক্রমণ রোধে ওয়ার্ডভিত্তিক রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোন ভাগ করা হতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৈঠকে এ বিষয়ে রূপরেখা হিসেবে বলা হয়েছে, যারা করোনায় আ’ক্রান্তের টেস্ট দিচ্ছে সেখানে ওই ব্যক্তির সব তথ্য থাকে। টেস্টে যারা পজিটিভ হবে তাদের তথ্য রোগী নিজে জানার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার বা চেয়ারম্যানদের জানিয়ে দেওয়া হবে। তখন ওয়ার্ডভিত্তিক রোগীর সংখ্যা হিসাব করে জোন ঠিক করা হবে। যেসব এলাকায় রোগী দ্রুত বৃদ্ধির চিত্র দেখা যাবে সেসব এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে। এভাবে দেশের অন্য কোথাও যদি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়, সেখানেও একই পদ্ধতি জোনিং হবে।

মেয়রদের একজন বলেন, কাদের স্বার্থে গার্মেন্ট খোলা হয়েছিল, কাদের পরামর্শে ঈদের পর তড়িঘড়ি করে সব খুলে দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব সিদ্ধান্ত সরকারের বিপক্ষে গেছে বলে তিনি মনে করেন। বৈঠকে উপস্থিত আরেকটি সূত্রের মতে, এখনো ১৫ থেকে ৩০ দিনের কড়া লকডাউনে গেলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে একাধিক জনপ্রতিনিধি মত প্রকাশ করেছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘সোমবারের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের আলোকে বিশেষজ্ঞরা কাজ শুরু করেছেন। তাঁরা উচ্চ ঝুঁকির শহরগুলোর বিভিন্ন এলাকায় আ’ক্রান্তের হিসাব অনুযায়ী জোনভিত্তিক চিত্র পর্যালোচনা করছেন। শিগগিরই তাঁদের দেওয়া সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সূত্রঃ কালের কন্ঠ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *