নয়ন-মিন্নি বিয়ের মিষ্টি বিতরণ করেন নয়নের মা !!

বরগুনায় আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হ’ত্যা মামলায় জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে আরও তিনজনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার পর স্বাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

ওই তিনজনের মধ্যে মাকসুদা বেগম নামের এক স্বাক্ষী আদালতকে জানান, ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর বিকেলে নয়ন ও মিন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর মিষ্টি বিতরণ করেন নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম।আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ নয়জন আসামি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ পর্যন্ত জেলা ও দায়রা আদালতে ৩৪ এবং শিশু আদালতে ১৭ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সমাপ্ত হলো।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় বরগুনা জেলা কারাগার থেকে পুলিশ পাহারায় আটজন প্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে দায়রা আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় জামিনে থাকা মিন্নিও আদালতে উপস্থিত হন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের আবার কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালতে স্বাক্ষী মাকসুদা বেগম বলেন, ‘আমরা নয়ন বন্ডের বাসায় ভাড়া থাকি। ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর বিকেলে নয়ন ও মিন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের মিষ্টি নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম আমাদের দেন।’

স্বাক্ষী সাইফুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘নয়ন বন্ডের সাথে আমি বরগুনা জেলা স্কুলে লেখাপড়া করেছি। সে আমরা ঘনিষ্ট বন্ধু। ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর নয়ন আমাকে ফোন করে তার বাড়িতে ডেকে নেয়। ওই দিন নয়ন ও মিন্নির বিয়ে হয়। আমি কাবিনে স্বাক্ষর করি।’স্বাক্ষী রাইয়ানুল ইসলাম শাওন বলেন, ‘আমি বরগুনা সরকারি ডিগ্রি কলেজে তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করি। নয়ন-মিন্নি ১৫ অক্টোবর বিয়ে করে। ওই বিয়ের কাবিননামায় আমি সাক্ষ্য হিসেবে স্বাক্ষর করি।’

আসামি মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘আদালতে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা কেউই বলেননি মিন্নি রিফাত শরীফ হ’ত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। তা ছাড়া আমরা কাবিননামা চ্যালেঞ্জ করেছি।’রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘আদালতে তিনজনের সাক্ষ্য ও জেরা সমাপ্ত হয়েছে। এতে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।’

এদি,কে শিশু আদালতে ১৪ আসামির বিরুদ্ধে আজ দুজনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। ওই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সানজিদ হোসেন ও আজিজুর রহমান রণি। শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান তাদের সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। তাদের ১০ জন আইনজীবী জেরা করেন।

শিশু আদালতে সাক্ষ্য শেষে সানজিদ হোসেন বলেন, ‘রিফাত শরীফ যেদিন খুন হয়েছে তার পরেদিন বরগুনা ক্যালিক্স একাডেমির রাস্তা থেকে পুলিশ রক্ত মাখা পিচ উদ্ধার করে। আমি জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করি। ’আজিজুর রহমান রণি বলেন, ‘ঘটনার দিন ২৬ জুন সকালে রিফাত শরীফকে যারা কুপিয়েছে, তা আমি দেখেছি। আমি যা দেখেছি তা আদালতে বলেছি। আমি কোনো অসত্য কথা বলিনি।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী সোহরাফ হোসেন মামুন বলেন, ‘আমার জেরায় আসামিরা হ’ত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তা প্রমাণ হয়নি।’রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাক্ষীরা যেভাবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাতে রাষ্ট্র ন্যায়বিচার পাবে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন বরগুনার সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হ’ত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন।

এ মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মুসা এখনো পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন। আর বাকি আসামিরা কারাগারে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *