পরকীয়া প্রেমিককে পেতে নিজেকে হ’ত্যার অভিনব নাটক স্ত্রীর, এরপর…

স্বামীকে ফেলে পরকীয়া প্রেমিককে বিয়ে করে সংসার করার জন্য অভিনব কৌশল অবলম্বন করে স্ত্রী মুক্তি বেগম। পালিয়ে যাওয়ার আগে তাকে হ’ত্যা করা হয়েছে বলে ছবি এডিট করে রাখে। তারপর প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়ার সময় ননদের মোবাইলে ইমো থেকে হ’ত্যা করা হয়েছে এমন ছবি পোস্ট করে এবং একটি খুদে বার্তা পাঠায়।

ওই খুদে বার্তায় বলা হয়, ‘তুই যেই হোস এই মেয়েটার আত্মীয়দের বলে দিস, আমি ওকে খালাস করে দিয়েছি, ওর সব জেদ আজকে শেষ করছি। বাড়ি যাচ্ছিল তাই না? আসল বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। লা’শটা খুঁজে নিশ। টাটা।’ এরপর বন্ধ করে দেয়া হয় স্ত্রী মুক্তির মোবাইল। ঘটনার আগে চলতি মাসের গত ১১ মে মুক্তি বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজাপুর থেকে নিখোঁজ হয় মুক্তি। এরপর স্বামী আকমল হোসেন বাদী হয়ে ওই দিনই বড়াইগ্রাম থানায় একটি হ’ত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এবং ময়ময়সিংহ জেলা পুলিশের সহায়তায় ১৩ মে মুক্তি ও প্রেমিক আবেদকে ময়ময়সিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেবগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে নাটোর নিয়ে আসে।

বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে নাটোর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আকমল হোসেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কুন্দইল গ্রামের মমিন সরদারের ছেলে। অপরদিকে স্ত্রী মুক্তি বেগম একই গ্রামের মমিন প্রামাণিকের মেয়ে। তারা সম্পর্কে মামাত-ফুফাত ভাইবোন। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর আকমল হোসেন স্ত্রী মুক্তি বেগমকে সাথে নিয়ে ঈশ্বরদী শহরে একটি ভাড়া বাসায় থেকে একটি ভ্যাটেনারি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ঈশ্বরদীর বাসায় ভাড়া থাকার সময় মুক্তির সাথে মোবাইলে ময়ময়সিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেরার দেবগ্রামের আব্দুল মেতালেবের ছেলে সানোয়ার হোসেন আবেদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু মুক্তি বিবাহিতা বিষয়টি আবিদের কাছে গোপন করে। এজন্য সে নিজেকে হ’ত্যার নাটক করে।

সেই নাটকের অংশ হিসেবে মুক্তি চলতি মাসের ১১ মে বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বের হয়। এরপর রাজাপুর থেকে ননদের মোবাইলে ইমো মেসেজ ও ছবি পাটিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর মুক্তি সিএনজি নিয়ে হাটিকুমরুলে যায়। সেখানে আবিদের সাথে মাইক্রোবাসে উঠে তারা পালিয়ে যায় এবং বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী রুপে দেবগ্রামে সংসার করতে শুরু করে। কিন্তু বড়াইগ্রাম থানায় মামলা দায়েরের পর বড়াইগ্রাম সার্কেলের এসএসপি হারুন আর রশিদ বিষয়টি পুলিশ সুপার লিটন কুমারকে অবহিত করেন। এরপর চলে হ’ত্যা রহস্য উদঘাটনের অভিযান। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে পুলিশ জানতে পারে আবিদ এবং মুক্তি ময়ময়সিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেবগ্রামে বসবাস করছে। পরে ময়ময়সিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তা নিয়ে নাটোর পুলিশ দেবগ্রাম থকে জীবিত মুক্তিসহ আবদেকে গ্রেফতার করে নাটোরে নিয়ে আসে। পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন, বড়াইগ্রাম সার্কেলের এসএসপি হারুন অর রশিদসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *