পোলট্রির ব্যবসা থেকে যেভাবে হলেন সাড়ে তিনশ বিমানের মালিক !!

বিশ্বের অনেক বড় বড় মানুষের জীবনের গল্পই আপনাকে অবাক করবে। বেশিরভাগ বর্তমানে সাফল্যের শীর্ষে থাকা ব্যক্তির জীবন মোটেই সাধারণ ছিল না। হতে পারে তাদের না পাওয়া বা অভাব তাদের বড় হতে অন্যপ্রেরণা জুগিয়েছিল।তেমনই একজন ব্যক্তি ক্যাপ্টেন জি আর গোপীনাথ। যিনি ভারতের প্রথম কম খরচের বিমান পরিষেবা চালু করার কর্ণধার।

‘সুরারাই পোত্রু’ সিনেমাটি দেখেছেন নিশ্চয়। অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পাওয়া এই তামিল ছবির হিরো সুরিয়া। একজন গ্রামের মানুষ কী ভাবে রাজনীতিক, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লড়াই করে কম খরচের বিমান পরিষেবা চালু করবে তা নিয়েই এই ফিল্ম। এই ফিল্মটি ‘সিম্পলি ফ্লাই’ নামে ২০১১ সালের আত্মজীবনীর অনুপ্রেরণায় তৈরি। জীবনীটি ছিল ক্যাপ্টেন জি আর গোপীনাথের।

তার এই চিন্তাধারা ভারতবাসীর জীবন বদলে দিয়েছিল। আগে যেখানে উচ্চবিত্তরাই শুধুমাত্র বিমানে যাতায়াত করতে পারতেন, গোপীনাথের প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পর মধ্যবিত্তের নাগালে চলে আসে বিমান পরিষেবা। ১৯৫১ সালে

রামাস্বামী আইয়েঙ্গার গোপীনাথের জন্ম কর্নাটকের ছোট গ্রাম গরুরে। ৮ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বাবা ছিলেন শিক্ষক। প্রথম কয়েক বছর বাড়িতেই পড়িয়েছিলেন তার বাবা। পঞ্চম শ্রেণি থেকে গোপীনাথ স্কুলে যেতে শুরু করেন। ১৯৬১ সালে তিনি সৈনিক স্কুলে ভর্তি হন।

বেঙ্গালুরুর ওই ছোট গ্রামে গরুর গাড়ি চেপে যাতায়াত করতেন তিনি। গরুর গাড়ি থেকেই তিনি মধ্যবিত্ত ভারতবাসীর বিমানের ডানা হয়ে উঠেছিলেন। ছোটবেলায় সেনাবাহিনীতে যোগদানের ইচ্ছা ছিল গোপীনাথের। ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে স্নাতক হন এবং জীবনের ৮ বছর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ছিলেন গোপিনাথ। মাত্র ২৮ বছর বয়সে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজের জীবন কাটাতে শুরু করেন।

কখনো করেছেন দুধের ব্যবসা। গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে গরুর দুধ অল্প দামে কিনে শহরে তা বিক্রি করতেন। এরপর কখনো রেশম চাষ, কখনো আবার পোলট্রি ফার্ম খুলেছেন। আবার কখনো এসব তুলে দিয়ে হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগকরেছেন। এক সময় আবার এনফিল্ড বাইকের ডিলার হয়েছিলেন। তবে শেষে তিনি বিমান পরিষেবাতেই মনোনিবেশ করেন।

১৯৯৬ সাল থেকে তিনি বিমান পরিষেবা ব্যবসায় যুক্ত হন। প্রথমে চার্টার্ড হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করেন। নাম রাখেন ডেকান এভিয়েশন। শুধুমাত্র ভিআইপিদের গন্তব্যে পৌঁছে দিত তার সংস্থা। এরপর তিনি মধ্যবিত্তদের জন্য কিছু করার মনস্থির করেন।২০০৩ সালে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তিনি বেঙ্গালুরু থেকে হুবলি পর্যন্ত কম খরচের বিমান পরিষেবা চালু করেন। মধ্যবিত্তের কাছে সেটা স্বপ্নের মতো ছিল। এই প্রথম নিজের খরচে বিমানের টিকিট কাটার কথা ভাবতে শুরু করলেন মধ্যবিত্তেরা।

অন্য এয়ারলাইন্সের থেকে প্রায় অর্ধেক টাকায় টিকিট দিত গোপিনাথের সংস্থা। তার এই দ্বিতীয় পরিকল্পনাও সফল হয়েছিল। তিনি প্রায় সাড়ে তিনশো ফ্লাইট চালু করেন দেশের মধ্যেই বিভিন্ন রুটে। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে কঠিন প্রতিযোগিতা শুরু হয়।বাজার ধরতে অন্য অনেক সংস্থাও কম টাকায় বিমানের টিকিট বিক্রি করতে শুরু করে। ক্রমে ক্ষতি হতে শুরু করে তার ব্যবসায়। শেষমেশ বিজয় মাল্যর কাছে তিনি সংস্থা বেচে দেন। কিংফিশারের সঙ্গে মিশে যায় ডেকান এয়ারলাইন।

এরপর তিনি এয়ার কার্গো পরিষেবা চালু করেন। নাম দেন ডেকান ৩৬০। এই ব্যবসাও বেশি দিন টানতে পারেননি তিনি। ২০১৩ সালের পর ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয় তাকে। ব্যবসা থেকে হাত তুলে নেয়ার পর রাজনীতিতে পা দিয়েছিলেন। তাতেও সাফল্য মেলেনি। ২০১৭ সালে একটি বই লেখেন।

তাতে ভারতবাসীর নাগালের মধ্যে বিমান পরিষেবা পৌঁছে দেয়া নিয়ে তার স্বপ্নের কথাই মূলত তুলে ধরেছেন। আপাতত আর কোনো ক্ষেত্রে পা বাড়াননি তিনি। স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতেই জীবন কাটাচ্ছেন মধ্যবিত্তকে বিমানে ওঠার স্বপ্ন দেখানো গোপীনাথ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *