Internation News

প্রথম যে বাবরি মসজিদে আঘাত করেছিলো সেই আজ মুসলিম !!

৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ ভারতের অযোধ্যায় অবস্থিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভে’ঙে ফেলে একদল বিপথগামী মানুষ। তাদের দাবি, এটি ‘ভগবান রাম’-এর জন্মভূমি এবং মসজিদের পূর্বে এখানে রামমন্দির ছিল। বিক্ষুব্ধ সেই জনতার অনেকেই পরে তাদের ভুল বুঝতে পারেন এবং অনুতপ্ত হন। কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করে বিস্ময় সৃষ্টি করেন। তেমনই একজন বাবরি মসজিদে প্রথম আঘাতকারী বলবীর সিং। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় মুহাম্মদ আমের। বর্তমানে তিনি একটি জুনিয়র হাই স্কুলের পরিচালক। পাশাপাশি ইসলাম প্রচারক হিসেবেও কাজ করছেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন আবরার আবদুল্লাহ

ইসলাম গ্রহণের আগে আমার নাম ছিল বলবীর সিং। ৬ ডিসেম্বর ১৯৭০ হরিয়ানা প্রদেশের পানিপথে আমার জন্ম। বাবা ছিলেন এক স্কুল শিক্ষক এবং অসাম্প্রদায়িক মানুষ। পানিপথেই আমার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তখন মুম্বাইয়ের পর পানিপথই ছিল শিবসেনার সবচেয়ে মজবুত কেন্দ্র। যুবকদের মধ্যে তারা কাজ করত। এক বন্ধুর অনুরোধে আমি শিবসেনায় নাম লেখাই। পানিপথের বিভিন্ন যুদ্ধের কাহিনি শুনিয়ে মুসলমানের বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করত তারা। বিশেষত মুসলিম সম্রাটদের বিরুদ্ধে অন্যায় ও অবিচারের অনেক অভিযোগ ছিল তাদের। বিষয়টি আমার বাবা জানার পর তিনি আমাকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। বাবা মুসলিম শাসকদের ন্যায়পরায়ণতা ও জনকল্যাণমূলক কাজের বিবরণ আমার সামনে তুলে ধরেন। তিনি সম্রাট বাবরের কথাই বেশি বলতেন এবং ১৯৪৭ সালে শিবসেনার ভূমিকাও আমাকে স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু বাবার সব চেষ্টাই বিফলে যায়। আমি দিন দিন শিবসেনার কার্যক্রমে সক্রিয় হয়ে উঠি এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হই।

’৯০ সালে লালকৃষ্ণ আদভানি রথযাত্রায় আমাকে পানিপথের কর্মসূচি সফল করতে বিশেষ দায়িত্ব দেন। তারা নানাভাবে আমাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং আমাদের মধ্যে ঘৃণার আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আমি শিবজির নামে শপথ গ্রহণ করি, যা-ই ঘটুক না কেন, আমি একাই গিয়ে রামমন্দিরের ওপর থেকে জুলুমের বোঝা (মসজিদ) ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। আমার কর্মতৎপরতার পুরস্কার হিসেবে আমাকে শিবসেনার যুব শাখার সহসভাপতি নির্বাচন করা হয়। আমি আমার যুব টিম নিয়ে ৩০ অক্টোবর অযোধ্যায় পৌঁছি। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও আমরা বাবরি মসজিদের কাছে পৌঁছতে পারলাম না। প্রচণ্ড রাগ হলেও অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না। ’৯২ সালের ১ ডিসেম্বর প্রথমে অযোধ্যা যাই। আমরা ৬ ডিসেম্বরের আগের রাতে বাবরি মসজিদের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাই এবং মসজিদের সামনে মুসলমানদের বাড়ির ছাদে রাত কাটাই।

আমাদের ভয় ছিল, না জানি ৩০ অক্টোবরের মতো আজও রামের সম্মান উদ্ধার না করে ফিরে যেতে হয়! নেতা আমাদের বাধা দিলেন এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে থাকতে বললেন। কিন্তু আমি তাঁর ভাষণ শুনতে শুনতে ঘরের ছাদ থেকে নেমে এলাম এবং কোদাল হাতে বাবরি মসজিদ ভাঙতে অগ্রসর হলাম। আমি সবার আগে মসজিদের ছাদে উঠলাম এবং মধ্যখানে গম্বুজে কোদাল দিয়ে আঘাত করলাম। আমার দেখাদেখি অনেকেই মসজিদ ভাঙায় অংশ নিল এবং মুহূর্তের মধ্যে তা গুঁড়িয়ে দিল। এরপর এক বিরাট সভা হয় এবং সবাই আমার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। মানুষের প্রশংসায় আমারও আনন্দের সীমা ছিল না। কিন্তু আমার বাবা খুব অসন্তুষ্ট হন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, আমি যেন বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। তাঁকে আমি কোনোভাবেই বোঝাতে পারিনি। অবশেষে তিনি বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তখন আমি বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসি।

বাবরি মসজিদ ভাঙায় বাবা খুব আঘাত পেয়েছিলেন। আমি ঘর ছেড়ে চলে আসার পরও তিনি মর্মপীড়ায় ভুগতেন। বলতেন, মালিক আমাকে মুসলিম বানালেন না কেন? মুসলিম হলে অন্তত আমি অবিচারকারীদের দলভুক্ত হতাম না। ৯ মার্চ ১৯৯৩ বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি আমার পরিবারের সদস্যদের বলে যান, ‘আমি মারা গেলে আমার লাশের কাছে যেন বলবীর না আসে, প্রথা অনুযায়ী আমাকে যেন পোড়ানো না হয়।’ পরিবারের সদস্যরা তাঁর অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করে। বাবা মারা যাওয়ার আট দিন পর তাঁর মৃত্যুসংবাদ পাই। বাড়ি গেলে বাবার কথা স্মরণ করে মা বলেন, ‘তুই এত ভালো মানুষটাকে মেরে ফেললি!’ এমনিতেই তখন বাবরি মসজিদ ভাঙার কাজে অংশ নেওয়ায় আমার মধ্যে অনুশোচনা হতে শুরু করেছে, তার ওপর বাবার মৃত্যু আমাকে আরো ব্যথিত করে।

আমার এক বন্ধু যোগিন্দর বাবরি মসজিদ ভাঙার পর সেখান থেকে কয়েকটি ইট নিয়ে আসে। সে ছিল জমিদারের ছেলে। এলাকায় ফিরে সে মসজিদের ইটের ওপর মানুষকে প্রস্রাব করার আহ্বান জানায়। এই ঘটনার পর সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অনেক চিকিৎসা করেও সে যখন ভালো হলো না, তখন তার বাবা এক মাওলানার পরামর্শে মুসলিম হন। এবং যোগিন্দর সুস্থ হয়ে যায়। যোগিন্দরও ইসলাম গ্রহণ করে এবং বাবা-ছেলে দুজনই তাবলিগে চলে যায়। জুন মাসে যোগিন্দর (এখন ওমর) তাবলিগ থেকে ফিরে এসে আমাকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানায় এবং তার পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণের অনুরোধ করে।

ওমর ২৩ জুন সোনিপথের যে মাওলানার হাতে ইসলাম গ্রহণ করে তাঁর সঙ্গে আমাকে দেখা করারও পরামর্শ দেয়। আমার বন্ধুই আমাকে সেখানে নিয়ে যায় এবং মাওলানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তিনিও আমাকে মুসলিম হওয়ার পরামর্শ দেন। আমিও মুসলিম হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, কিন্তু প্রকাশ করলাম না। দুই দিন আমি মাওলানার সঙ্গে থাকলাম। ২৫ জুন ১৯৯৩ জোহরের নামাজের পর আমি ইসলাম গ্রহণ করি। মাওলানা আমার নাম রাখেন মুহাম্মদ আমের। পরে আমার মাও মুসলিম হন।

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button