বাংলাকে গানে গানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বাংলাপ্রেমী এই জাপানি দম্পত্তি !!

তাদের চেহারা দেখে যেকেউ বলবে, তিনি জাপানি। যখন কথা বলবেন তার সঙ্গে, মনে হবে বাংলাদেশি! একজন জাপানি হয়েও শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলেন তিনি। ওয়াতানাবে এতটাই বাংলাপ্রেমী যে, নিজেকে যতটা না জাপানি পরিচয় দেন, তারচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বাংলাদেশি হিসেবে। বাংলা এতটাই তার পছন্দ যে, আনমনে বাংলা বলে চলেন, ইচ্ছেমতো প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে লিখে চলেন বাংলা ভাষা।

জানা যায়, পুরো নাম মায়ে ওয়াতানাবে। তার স্বামী শুনসুকে মিজুতানিও বাংলাকে একইভাবে ভালোবাসেন। ‘বাজনা বিট’ নামের একটি বাংলা গানের দল করেছেন এ দম্পত্তি। তারা গানে গানে বাংলা ভাষাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সম্প্রতি এক আড্ডায় বাংলা প্রেম নিয়ে অকপটে বলেন এই জাপানি দম্পত্তি।

প্রথমে বাংলাদেশে আসেন শুনসুকে মিজুতানি। তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসি। তখন কাজের প্রয়োজনে খুব ভয়ে ভয়েই পা রাখি এদেশে। যখন এদেশে আসি, এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করি তখন বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে যাই। গ্রামে গিয়ে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে চলাফেরা করেছি। জাপান তো একটা উন্নত দেশ, কিন্তু সেদেশে হিউম্যানিটি হারিয়ে গেছে। যেটা বাংলাদেশের ভেতরে আমি দেখি। তখনই বাংলাদেশে বাকি জীবনটা কাটানোর স্বপ্ন দেখি এবং থাকতে শুরু করি।’

জানা যায়, গত ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে বসবাস শুরু করেন এ দুই জাপানি। এরমধ্যে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন। তাদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো দেশ বাংলাদেশ। এখানকার মানুষের মধ্যে যে ভাষা প্রেম, তা আর কোথাও নেই। এদেশের মানুষের দেখাদেখি শুনসুকে-ওয়াতানাবেও বাংলাকে ভালোবেসেছন।

তারা জানেন বায়ান্নর গল্প। প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে যান শহিদ মিনারে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ গানটির চারলাইন গাইতে গাইতে ফুল দেন বেদি স্পর্শ করে। এসময় তার চোখে অশ্রু ঝরে।

এ ব্যাপারে ওয়াতানাবে বলেন,’ আমরা একুশের কয়েকবার শহীদ মিনারে যাই। যখন লাইনে দাঁড়িয়ে ফুল দিই, আর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি শুনি, তখন অঝোরে চোখ দিয়ে পানি পড়ে। মানুষ নিজের প্রাণ আর রক্ত দিয়েছে যে ভাষার জন্য, সেই ভাষা শিখে অনেক ভালো লাগছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি জাতি তার ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শিখেছে।’

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *