বাংলাদেশি তরুণীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করায় ভারতীয় দম্পতি শ্রীঘরে !!

সিঙ্গাপুরে তিন বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতন ও এদের একজনকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করায় ভারতীয় এক দম্পতিকে সাড়ে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন স্থানীয় একটি আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে সাড়ে সাত হাজার ডলার করে অর্থদণ্ডও দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) জেলা জজ সাইফুদ্দিন সারুবনের আদালত এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এ খবর জানায়।দণ্ডিত দম্পতি হলেন- মালকার সাবলারাম অনন্ত (৫১) ও প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য রাজেশ (৩১)। নিপীড়িত এক তরুণীর পারিশ্রমিক আটকে রাখায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে ৪ হাজার ৮৭৮ ডলার (৪ লাখ ১৫ হাজার টাকার বেশি) পরিশোধের আদেশ দেয়া হয়েছে অনন্তকে।

সিঙ্গাপুরে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে শ্রমিক-পাচার মামলায় প্রথম রায় এটি। এ মামলায় ওই দম্পতির বিরুদ্ধে সেই ভুক্তভোগীদের ওপর ক্ষমতার অপব্যবহারের তিনটি অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে নারী সনদের আওতায় তিনটি-পতিতাবৃত্তি সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ প্রমাণ হয়। তার স্বামীর বিরুদ্ধে একই ধরনের দু’টি অভিযোগ প্রমাণ হয়।

এ দম্পতি সিঙ্গাপুরে একটি হিন্দি নাইট ক্লাব চালাচ্ছিলেন। রায় ঘোষণাকালে আদালত বলেন, উভয়েই সমানতালে অপরাধ করেছেন। দু’জনেই তাদের ভিকটিমদের ওপর ‘পুরোপুরি ক্ষমতা ফলিয়েছেন’।ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর জেমস চিউ ও রিমপ্লিজিৎ কৌর আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলেন, শহরের ওই এলাকায় নাইট ক্লাবটি পরিচালনায় প্রধান ব্যবস্থাপক ছিলেন মালকার। তিনিই তার নাইট ক্লাবে নিয়োগকৃত শিল্পীদের ‘অন্য নৈশকেন্দ্রে’ পাঠানোর অপকর্মটি করছিলেন।

তিন বাংলাদেশি তরুণীর ওপর নিপীড়নের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মালকার তার নাইট ক্লাবের শিল্পী হিসেবে ওই তিন তরুণীকে নিয়োগ দেন এবং নিজেদেরই অ্যাপার্টমেন্টে তাদের থাকতে বাধ্য করেন।

শুনানিতে নিপীড়িত তরুণীরা জানান, ওই দম্পতি অ্যাপার্টমেন্ট বা ক্লাব ছাড়া বাইরে বেরোতে দিতেন না তাদের। সেজন্য তাদের পাসপোর্ট, কাজের অনুমতিপত্র এমনকি মোবাইল ফোনও জব্দ করে রাখেন। তিন তরুণীকেই প্রতিদিন ক্লাবে কাজ করতে হতো। তারা ক্লাবে কোনো বকশিস পেলে সেটাও নিয়ে নিতেন ওই দম্পতি। এমনকি তাদের ‘আয়ের টার্গেট’ বেঁধে দিতেন, ‘টার্গেট পূরণে’ ব্যর্থ হলে সমপরিমাণ অর্থ কেটে নেয়া হতো তাদের পারিশ্রমিক থেকে।

একদিন প্রিয়াঙ্কা ওই তিন তরুণীর একজনকে বলেন, তাকে ‘কাস্টমারদের সাথে বাইরে যেতে হবে’। এরপর কাস্টমারদের শয্যাসঙ্গী হতে তাকে বাধ্য করা হয়।এই নিপীড়নের মুখে কয়েকবার সেই তরুণী দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, ফিরলে তাকে ‘নিয়োগের সময় খরচ হওয়া’ ৪ লাখ টাকা শোধ করে যেতে হবে।

পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করানোর সময় প্রিয়াঙ্কা ওই তরুণীকে বলতেন, তিনি যা আয় করবেন তার অর্ধেক পাবেন এবং তা দেশে স্বজনদের কাছে পাঠাতে পারবেন। কিন্তু যতবারই তিনি ‘কাস্টমারদের সাথে যৌনতা করে আসতেন’, ততবারই প্রিয়াঙ্কা তার দেহ তল্লাশি করে অর্থ, এমনকি ‘কাস্টমারদের’ দেয়া উপহারও নিয়ে নিতেন।

এভাবে পাঁচ মাস নিপীড়িত হওয়ার পর ওই তরুণী ২০১৬ সালের মে মাসে সেই ক্লাবটি থেকে পালিয়ে যান। পরে তার কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ বাকি দুই তরুণীকেও উদ্ধার করে। এরপর দায়ের হয় মামলাটি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *