বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার যত নিদর্শন !!

কীভাবে জানব আল্লাহ তায়ালা আমায় ভালোবাসেন কি না? যারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতে যেতে চায়, তাদের সবারই এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন।যেহেতু আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা একটি বিমূর্ত বিষয়, তাই নিশ্চিত করে কখনোই বলা যাবে না যে, আল্লাহ তায়ালা তার নির্দিষ্ট কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন। তবে কিছু নিদর্শনের মাধ্যমে কারো প্রতি আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।

১. কাজে-কর্মে, চিন্তা-ভাবনায় সব সময় যদি আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ হয়।এটি বান্দার প্রতি আল্লাহ তা’য়ালার ভালোবাসার একটি অন্যতম নিদর্শন। একটি হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি আমার কোনো বান্দা আমাকে স্মরণ করে, আমিও তাকে স্মরণ করি।কাজে-কর্মে কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পন্থা অবলম্বন করার অপর নামই হল আল্লাহ তায়ালার স্মরণ।

২. কুরআনকে যদি আঁকড়ে ধরা যায়

কুরআন হল আল্লাহ তায়ালার বাণী। মানুষ যখন কুরআন তিলাওয়াত করে, তখন সে প্রকারান্তরে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কথা বলে।কেউ যদি বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে ও কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়, তাহলে বুঝতে হবে, ওই বান্দাকে আল্লাহ তা’য়ালা ভালোবাসেন।কেননা রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।

৩. আল্লাহ তায়ালার প্রিয়ভাজনদের সঙ্গে যদি সুসম্পর্ক থাকে

আল্লাহ তায়ালার প্রিয়ভাজনদের মধ্যে রয়েছেন নবী-রাসূল, শহীদ ও তার সৎকর্মশীল বান্দাগণ। এদের মধ্যে যারা গত‌ হয়েছেন, তাদের জীবনাদর্শ অধ্যয়ন করে তা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব।

আর যারা জীবিত রয়েছেন, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা মানে হল জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের মূল্যবান পরামর্শ অনুসরণ করা।পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার নেককার বান্দাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে, পরকালেও তাদের সাহচর্য লাভ করা যাবে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, দুনিয়াতে যার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে, আখিরাতেও সে তার সঙ্গে থাকবে।

৪. যদি ইবাদাত করা সহজ হয়

এটি বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। বেশি বেশি ইবাদাত করার মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালার নিকটবর্তী হওয়া যায়।সুতরাং ইবাদাতে যদি মজা পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে আল্লাহ তায়ালা সংশ্লিষ্ট বান্দাকে ভালোবাসেন। কারণ আল্লাহ তা’য়ালার ভালোবাসাই তার হৃদয়ে ইবাদাতের তৃষ্ণা সৃষ্টি করছে।

৫. হৃদয় যদি কুকর্ম সাধনে বাধা দেয়

বান্দার জন্য আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার এটিও একটি উত্তম নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা যদি কোনো খারাপ কাজে লিপ্ত হতে উদ্যত হয়, তার হৃদয় তাকে বাধা দেয়। পরকালে খারাপ কাজের জন্য হিসাবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে পৃথিবীতেই তার হৃদয় তাকে হিসাবের সম্মুখীন করে।

শয়তান খারাপ কাজগুলোকে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করে।যেমনটি আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘শয়তান তাদের কুকর্মসমূহকে তাদের সামনে সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করেছে’। (সূরা নাহল: ৬৩) তবে আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয়ভাজনদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করেন।

৬. হৃদয়ে যদি আল্লাহ তায়ালার শাস্তির ভয় থাকে

যতই ভালো কাজ করা হোক না কেন, আল্লাহ তা’য়ালার প্রিয় বান্দাদের হৃদয় সর্বদা আল্লাহ তায়ালার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে।কারণ ভালো কাজগুলো আল্লাহ তা’য়ালা কবুল করে নিয়েছেন কিনা কারো পক্ষেই তার নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়। তবে হৃদয়কে পরিশোধিত করে আল্লাহ তা’য়ালার ভয় ও রহমতের আশায় সম্পাদিত ভালো কাজগুলো কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

আল্লাহ তায়ালার প্রিয়ভাজন হতে পারা পরম সৌভাগ্যের। তবে আল্লাহ তা’য়ালার ভালোবাসা তাঁর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হয়।যেমনটি রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের বলতে শিখিয়েছেন, اللهم إنا نسألك حبك، وحب من يحبك، وحب عمل يقربنا إلى حبك.

অর্থ: হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে আপনার ভালোবাসা চাই, যারা আপনাকে ভালোবাসে তাদের ভালোবাসা চাই এবং (আমাদের হৃদয়ে) ওই সমস্ত আমলের ভালোবাসা চাই যেগুলো আমাদেরকে আপনার নিকটবর্তী করবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *