Internation News

বিশ্ববাসীকে লজ্জায় ফেলে ইতিহাস গড়লেন গাম্বিয়ার আবুবকর !!

ইতিহাসে পাতায় ঢুকে গেলেন গাম্বিয়া ও আবুবকর তামবাদু। রাখাইনে মিয়ানমারের গণহ’ত্যার বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ হচ্ছে গাম্বিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা। গাম্বিয়া মিয়ানমারকে গণহ’ত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

তাই শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চিকে গণতন্ত্র, মানবাধিকারের শিক্ষা দিচ্ছে গাম্বিয়া। অং সান সু চি যথারীতি সব জলাঞ্জলি দিয়ে গণহ’ত্যার পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন। আর এদিকে আবুবকর লজ্জায় ফেলে দিলেন মানবতার স্বঘোষিত অভিভাবক, আত্মীয়, মালিক ও সেবায়েতদের।

মিয়ানমারে বিরুদ্ধে মামলার মূল উদ্যোক্তা হচ্ছেন গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। অনেক দেশই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহ’ত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করতে পারত।

কিন্তু সবাই যখন আহা-উহু করে, নিন্দা জানিয়ে বিষয়টি পার করে দিচ্ছিল, ঠিক তখনই গণহ’ত্যার মামলা করে গাম্বিয়া সবাইকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করল।

আন্তর্জাতিক আদালতে রায় কী হবে, সেটা পরের বিষয়। কিন্তু গণহ’ত্যার মামলা হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। এখন অন্তত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারকে গণহ’ত্যাকারী বলা যাবে। আবুবকর প্রমাণ করে দিলেন, একজন ব্যক্তিই ইতিহাসে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন।

গাম্বিয়া খুব বেশি প্রভাবশালী বা পরিচিত দেশ না। আফ্রিকার রাজনীতি বা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গাম্বিয়ার কোনো প্রভাবের কথা তেমন শোনা যায় না। এমনকি ওআইসিতেও গাম্বিয়াকে বড় ধরনের শক্তি হিসেবে কেউ বিবেচনা করে না। তবে গাম্বিয়া মানবিকতার দিক থেকে এখন শীর্ষেই থাকবে।

মানবাধিকার, সম-অধিকারের বিষয়ে এত দিন পশ্চিমাদেরই চ্যাম্পিয়ন বলে মনে করা হতো। কিন্তু গাম্বিয়া সেই ধারণা পাল্টে দিল খানিকটা। দরিদ্র, ক্ষুদ্র দেশও যে মানবাধিকার, জন-অধিকারের পক্ষে কথা বলতে পারে, গাম্বিয়া তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

মনে হচ্ছে, সারা বিশ্বের কথাই বলছে গাম্বিয়া, ঠিক যখন গাম্বিয়া স্বৈরশাসকের আলখাল্লা ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। দেশটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করার জন্যও কাজ করছে। এসবই গাম্বিয়াকে মানবিকতার জগতে এক অনন্য জায়গায় নিয়ে যাবে।

পশ্চিম আফ্রিকার দরিদ্র এক দেশ গাম্বিয়া। জনসংখ্যা মাত্র ২০ লাখ। তিন দিকে সেনেগাল দিয়ে ঘেরা। আটলান্টিকের তীরে ছোট্ট উপকূল রয়েছে। ২০১৮ সালে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ঢাকা বৈঠকে গাম্বিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে না পাঠিয়ে শেষ মুহূর্তে বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদুকে পাঠায়। আবুবকর ওআইসির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।

দেশে ফিরে গিয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবুবকর জানান, ‘রোহিঙ্গাদের প্রতিটি কথায় গণহ’ত্যার কাহিনি লেখা আছে। আমি এখানে রুয়ান্ডার গণহ’ত্যার সঙ্গে মিল খুঁজে পাই।’

রোহিঙ্গা গণহ’ত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার জন্য আবুবকর ওইআইসিতে প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং এই বছর ওআইসিকে মামলায় সহযোগিতা করতে সম্মত করেন। এভাবেই আবুবকর পশ্চিম আফ্রিকার এক ক্ষুদ্র দেশ গাম্বিয়াকে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সামনে নিয়ে আসেন।

জানা যায়, ব্রিটেনে আইন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে গত শতকের শেষ দিকে গাম্বিয়া ফিরে আইন পেশায় যোগ দেন আবুবকর। ২০০০ সালে একটি ঘটনা আবুবকরের চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওই বছর ১৪ জন শিক্ষার্থীকে রাজপথে হ’ত্যা করে সরকারি বাহিনী।

এরপরই আবুবকর মানবাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০০৩ সালে জাতিসংঘে যোগ দিয়ে তানজানিয়ায় রুয়ান্ডা গণহ’ত্যার বিচারে কৌঁসুলি হিসেবে অংশ নেন। বলা হয়ে থাকে, আবুবকরের কৌশলী ও দৃঢ় ভূমিকার কারণে সাবেক সেনাপ্রধান আউগুস্টিন বিজিমুনিগোর ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়।

গত তিন বছরে অনেকটাই বদলে গেছে গাম্বিয়া। ২২ বছরের শাসনামলে গাম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়া জামেহ বিরোধীমত দমন করে এক ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। হ’ত্যা, গু’ম, আটক করে নি’র্যাতন নিত্যকার ঘটনা ছিল গাম্বিয়াবাসীর জীবনে।

২০১৬ সালের নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে আদম ব্যারো প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়া জামেহকে পরাজিত করেন। এরপরই গাম্বিয়ার পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। পরবর্তীতে নতুন সরকার ট্রুথ কমিশন গঠন করলে ইয়াহইয়ার আমলের অনেক কুকীর্তি বেরিয়ে আসে। ইয়াহইয়ার দুঃশাসনই গাম্বিয়াকে মানবতার পক্ষে লড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে আবুবকর জানান।

আর রুয়ান্ডা গণহ’ত্যা বিচারের অভিজ্ঞতা আবুবকরকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহ’ত্যার মামলা করতে সাহস জুগিয়েছে। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ছিল এটা। সবাই যখন নীরবে মিয়ানমারের গণহ’ত্যা অবলোকন করছিল কিন্তু গণহ’ত্যা বন্ধে তেমন জোরালো ভূমিকা রাখছিল না, তখনই এগিয়ে এল গাম্বিয়া।

এদিকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহ’ত্যার শুনানির একপর্যায়ে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু বলেছেন, কেবল মিয়ানমারই নয়, বিশ্বমানবতাই আজ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিবেকের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কণ্ঠ জোরালো করতে হবে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হ’ত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

এই নৃশংসতাকে ‘গণহ’ত্যা’ আখ্যা দিয়ে গত ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ মামলা করে গাম্বিয়া। সেই মামলায় ১০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া বিচারকাজ চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

গাম্বিয়ার পক্ষে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করা অ্যাটর্নি জেনারেল তামবাদু আন্তর্জাতিক গণহ’ত্যা প্রশ্নে বিশ্বজুড়েই নন্দিত আইনজীবী। এর আগে তিনি রুয়ান্ডায় গণহ’ত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরের বিশেষ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন।

মঙ্গলবার তিনি আদালতে বলেছেন, ‘আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে সারা বিশ্বের বিবেককে জাগ্রত করতে চাই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কণ্ঠ জোরালে করতে চাই।’

তামবাদু বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে আরেকটি গণহ’ত্যার ঘটনা ঘটছে আর আমরা এটি বন্ধে কিছুই করছি না। এটি আমাদের সম্মিলিত বিবেকের জন্য কলঙ্ক। এটি শুধু মিয়ানমারের বিচার নয়, আমাদের সম্মিলিত মানবতা আজ বিচারের কাঠগড়ায়’

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button