বিশ্বে মহামারিতে রূপ নিতে পারে করোনা ভাইরাস !!

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সম্পূর্ণ আলাদা (আইসোলেশন) কক্ষ ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ২৫০ শয্যার পৃথক কক্ষ স্থাপন করা হচ্ছে। চীনের নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিয়মিতভাবে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রচারিত গুজবকে যথাযথভাবে সঠিক তথ্য দিয়ে জবাব দেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। প্রায় এক মাস আগে চীনে নতুন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে ২৬টির বেশি দেশে।

বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ আরো কতটা ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে এবং কত মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। এখনো এটিকে বিশ্ব মহামারি বলে ঘোষণা করা হয়নি। তবে বিশ্বকে এই করোনা ভাইরাসের মতো এক মহামারির মুখোমুখি হতে হবে এমন আশঙ্কায় কর্মকর্তারা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। একই সময়ে যখন বিশ্ব জুড়ে বহু দেশের মানুষ কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়, তখন একে বিশ্ব মহামারি বলে বর্ণনা করা হয়। এর সাম্প্রতিক একটি উদাহারণ হচ্ছে ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ঐ বিশ্ব মহামারিতে শত শত মানুষ মারা গেছে। নতুন কোনো ভাইরাস, মানুষ সহজেই যেটির সংক্রমণের শিকার হয় এবং যা মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিস্তৃতি লাভ করে, এ অবস্থাকে তখন বিশ্ব মহামারি হিসেবে বলা হয়। করোনা ভাইরাসের বেলায় এই সবগুলো বৈশিষ্ট্যই দেখা যাচ্ছে।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল্যায়নে ঝুঁকির মাত্রা চীনে অতি উচ্চ, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উচ্চ এবং সারা বিশ্বে উচ্চ মাত্রার। সংস্থার পরিবেশিত তথ্যে জানা যায়, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ২০ হাজার ৬৩০ জন নিশ্চিত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ২৪১ জন। এদের মধ্যে মারাত্মক অবস্থায় আছে ২ হাজার ৭৮৮ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে ৪৯০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৬৩ জন। চীনের বাইরে নিশ্চিত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আছে ২৬টি দেশের ১৫৯ জন।

গতকাল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, আশকোনা কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রের সাতটি ডরমেটরিতে চীনফেরত যাত্রীগণ অবস্থান করছেন। চিকিত্সা ও নার্সিং সেবা কার্যক্রমে সেনা কর্তৃপক্ষের মেডিক্যাল সার্ভিস সহায়তা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সব ওষুধ সরবরাহ করছে, জরুরি প্রয়োজনে তাত্ক্ষণিকভাবে ওষুধ কেনা হচ্ছে। সামরিক বাহিনীর মিলিটারি পুলিশ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

এ উদ্দেশ্যে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩০ শয্যার সম্পূর্ণ আলাদা শাখা খোলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনে অবস্থিত বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। এদিকে আশাকোনা কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে চীনের উহান থেকে আগতদের মধ্য থেকে জ্বরে আক্রান্ত এক শিশুকে বাবা-মাসহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। আইইডিসিআরের পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী।

চীনের জাতীয় পরিস্থিতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চীনের সব রোগীর মধ্যে ৯৭ শতাংশ হুবেই প্রদেশের। রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ৬০ বছরের বেশি বয়সি, ৭৫ শতাংশ রোগী অন্যান্য রোগেও আক্রান্ত, মৃত্যুবরণকারীদের দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ।চীনের উহানফেরত বাংলাদেশিদের অভিভাবকদের যেকোনো প্রশ্নের জবাব দেবে আইইডিসিআর। এখন থেকে প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে নিয়মিতভাবে এই কার্যক্রম চলবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *